
সেক খালিদ আলি
দীর্ঘদিন ধরে স্কুল সার্ভিস কমিশন (এসএসসি) পরিক্ষার মাধ্যমে নিযোগ হয়নি।মাদ্রাসা সার্ভিস কমিশনে সামান্য নিয়োগ হলেও এখনো সংকটে রয়েছে ৬১৪ টি মাদ্রাসা। এদিকে গ্রুপ-ডির জন্য আলাদা রিক্রুটমেন্ট বোর্ড গঠিত হয়েছে ঠিকই কিন্তু নিযোগ সম্পন্ন হয়নি।
- এস.এস.সি
স্কল সার্ভিস কমিশনের (এস.এস.সি) পরীক্ষার মাধ্যমে দীর্ঘদিন নিয়োগ না হওয়ায় শিক্ষক শিক্ষিকার চরম অকাল দেখা দিয়েছে রাজ্যের সরকারি, সরকারি সাহায্যপ্রাপ্ত এবং সরকার পোষিত স্কুল গুলোয়। এস.এস.সির মাধ্যমে শেষ নিয়োগ হয়েছিল ২০১২ সালে। তারপর তিন বছর কোনও পরীক্ষা নেওয়া হয়নি। ২০১৬-র শেষে পরীক্ষা হয়েছে ঠিকই কিন্তু নিয়োগ পক্রিয়া এখনও শুরু হয়নি। খুবই লক্ষণীয বিষয় হচ্ছে যে, এই স্কুল গুলোতে ছাত্র-শিক্ষক অনুপাত দেখলে আপনি শিউরে উঠবেন। ইউনাইটেড ডিস্ট্রিক্ট ইনফরমেশন সিস্টেম ফর এডুকেশন (ইউডাইস) এর রিপোর্ট অনুযায়ী, রাজ্যের মাধ্যমিক স্কুলে অঙ্কে ৮৫৭ জন পড়ুয়া পিছু মাত্র ১ জন শিক্ষক। বিজ্ঞান বিভাগে ৩৮৩ জন পড়ুয়া পিছু ১ জন শিক্ষক। সমাজ বিজ্ঞানে ৩৮৯ জন পড়ুয়া পিছু ১ জন।
ভাষাগত বিষয়ে (বাংলা ও ইংরেজি) ২৬০ জন পড়ুয়া পিছু ১ জন শিক্ষক।
স্কুল পিছু শিক্ষক শিক্ষিকার তনুপাত দেখলে তাজ্জব বনে যেতে হয়।
তিনটি স্কুল পিছু একজন গনিত শিক্ষক।
বিজ্ঞান ও সমাজ বিজ্ঞানে তিনটি স্কুলের জন্য দুজন শিক্ষক।
বাংলা ইংরাজির ক্ষত্রে স্কুল প্রতি একজন শিক্ষক।
আমরা জানি নিয়ম মতো মাধ্যমিক স্তরে ছাত্র ও শিক্ষক অনুপাত ৩০ঃ১ হওয়া উচিত।
এখানে প্রশ্ন থেকে যায় বিভিন্ন ক্ষেত্রে এত শিক্ষক অপ্রতুল হলেও মাধ্যমিক পর্ষদ অনুমোদিত সাড়ে দশ হাজার স্কুলে পড়াশুনা চলছে কিভাবে?
পর্যাপ্ত শিক্ষক শিক্ষিকা নিয়োগ না হওয়ার কারনে দেখা যাচ্ছে উচ্চ মাধ্যমিকের জন্য নিযুক্ত শিক্ষক শিক্ষিকারা পঞ্চম থেকে দশম শ্রেণি পর্যন্ত বিভিন্ন বিষয়ে ক্লাস নিচ্ছেন। যার দরুন একদিকে সঠিক ভাবে শিক্ষা দেওয়া সম্ভব হচ্ছেনা পড়ুয়াদের, অন্যদিকে নিয়োগ না হওয়ার কারনে প্রচুর পরিমাণের যোগ্য ছেলেরা বেকারত্বের সম্মুখীন।
- এম.এস.সি
২০০৮ সালে মাদ্রাসা সার্ভিস কমিশন গঠিত হয়। এই কমিশন গঠনের অন্যতম লক্ষ ছিল দুর্নীতি মুক্ত, স্বচ্ছ নিয়োগ পদ্ধতি পরিচালনা করা । ২০০৮ থেকে ২০১৬ পর্যন্ত মাদ্রাসা সার্ভিস কমিশনের মাধ্যমে মাদ্রাসায় শিক্ষকের চাকরি পেয়েছেন ৯৪৩৬ জন ও শিক্ষাকর্মী পদে চাকরি পেয়েছেন ১১৬২ জন।
সমস্যা তৈরি হয়, যখন মাদ্রাসা সার্ভিস কমিশনকে অবৈধ্য আখ্যা দিয়ে কলকাতা হাইকোর্টে ২০১৩ সালে মামলা দায়ের করে কাঁথি রহমানিয়া হাই মাদ্রাসা। তারপর বহুদূর পর্যন্ত জল গড়ায়। মামলা যায় সু্প্রিমকোর্টে, যা এখনো পুরোপুরি নিষ্পত্তি হয়নি। এদিকে রাজ্যে বর্তমানে ৬১৪ টি হাই ও সিনিযর মাদ্রাসা শিক্ষকের অভাবে গভির সংকটে রয়েছে। যেখানে ২০১৩ সালে শূন্যপদ ছিল ৩৭০০, বর্তমানে তা প্রায় 8 হাজা়র হয়ে দাড়িয়েছে। স্কুল প্রতি প্রায় ১৩ জন শিক্ষক কম। এখান থেকে অনুমেয়, মাদ্রাসা শিক্ষাব্যবস্থার হাল কোন জাযগায় দাঁড়িয়ে আছে ! নিযোগ কে করবে,কমিশন না ম্যানেজিং কমিটি এই বিতর্কে কেটে গেল ছটি বছর। এর মধ্যিখানে অনেক আন্দোলন সংঘটিত হয়েছে এবং কমিশনের পক্ষে জনমতও এসছে কিন্তু রাজ্য সরকার প্রথম থেকেই ডিফেন্সে থেকেছে। ছ বছর কেটে গেছে কিন্তু রাজ্য সরকারের পক্ষ থেকে সমাধানের কোন পথ বের করা হযনি!
সু্প্রিমকোর্টের নির্দেশ ২০১৪ সালে প্রকাশিত ষষ্ঠ মাদ্রাসা বিজ্ঞপ্তি অনুসারে ১ লক্ষ ২০ হাজার আবেদনের ভিত্তিতে লিখিত পরীক্ষায় উত্তীর্ণদের দিযে নিয়োগ প্রক্রিয়া সম্পাদন করতে হবে। সু্প্রিমকোর্টের নির্দেশকে সামনে রেখে ৩১৮৩ শূন্যপদ পূরনের জন্য ইন্টারভিউ-এ ডাকা হয় ৩৭০৬ জনকে। নিয়োগের ক্ষেত্রে দেখা যায় চূড়ান্ত প্যানেলে ২৫৭০ জনের নাম। সেই সমস্ত শিক্ষকদের ২৬-৩০ জুন পর্যন্ত কাউন্সেলিং এর মাধ্যমে নিয়োগ দেওয়া হয়। অর্থাৎ ০৪-০৪-২০১৪ অনুযায়ী এখনো ৬১৩ টি সিট ফাঁকা আছে অথচ ইন্টারভিউয়ের পর বাদ দেওয়া হয়েছে ১১৩৬ জন চাকরি প্রর্থীকে। এবং সেই সময় কোন ওয়েটিং লিষ্ট প্রকাশ করা হয়নি! সেই সাথে এসএসসির মত মাদ্রাসা সার্ভিস কমিশন দ্বিতীয় দফায় প্যানেল প্রকাশ করার ব্যপারে পরিষ্কার কোন ধারনা দিতে পারেনি। এদিকে কমিশন বলছে ২ শতাংশ নির্দিষ্ট সংখ্যা পূরন করার জন্য ওয়েটিং প্রকাশ করবে। তাহলে ওয়েটিং লিষ্ট অথবা দ্বিতীয় দফা প্যানেল প্রকাশ না করে ২৫৭০ জনের বাইরে সকলকে নন সিলেকটেড০ দেখানো হলো কেন?
- গ্রুপ-ডি
গ্রুপ-ডির জন্য আলাদা রিক্রুটমেন্ট বোর্ড গঠন হওয়ার পর রাজ্য সরকারের বিভিন্ন দপ্তরে গ্রুপ-ডি ৬০০০ শূন্য পদে প্রথমবার নিয়োগের জন্য ‘পশ্চিমবঙ্গ গ্রুপ“ডি রিক্রুটমেন্ট বোর্ড’ বিজ্ঞপ্তি জারি করে। তার নিরিখে উক্ত বোর্ডের অধিনে ২০১৬ সালে প্রথমবার লিখিত পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হয়। এবং লিখিত পরীক্ষার দীর্ঘ সময় পর ২০১৮ ফেব্রুয়ারিতে লিখিত সফল পরীক্ষারদের ইন্টারভিউ নেওয়া হয়েছে। ইন্টারভিউ নেওয়ার চারমাস অতিক্রান্ত হয়ে যাওয়ার পরেও এখও নিয়োগ হয়নি।
এখানে লক্ষণীয় বিষয হচ্ছে- এই ছয় হাজার পদের জন্য আবেদন জমা পড়ে প্রায় ২ লাখের বেশি। লিখিত পরীক্ষার নিরিখে সফল ৯ হাজার পরীক্ষার্থীকে ইন্টারভিউয়ে ডাকা হয়। এদিকে মাননীয় মূখ্যমন্ত্রীর ঘোষনা তৃনমূল বিধায়কদের হাতে পাঁচটি করে কোটা থাকবে অর্থাৎ কার্যত সংরক্ষণ হয়ে গেল ১৪৭০ টি পদ, সাধারন ছাত্রছাত্রীদদের জন্য পড়ে রইলো মাত্র ৪৫৩০ টি পদ। গোটা রাজ্যজুড়ে বিশেষত শিক্ষার বিভিন্ন ক্ষেত্রে প্রয়োজন অনুসারে নিয়োগ না হওয়ার কারনে চরম সংকটে রাজ্যের শিক্ষা ব্যবস্থা। প্রইমারী থেকে পিএসসি সব ক্ষেত্রেই নিয়োগে অনিয়ম, দুর্নীতির কারণে বারবার প্রশ্নের সম্মুখীন হচ্ছে রাজ্য।
পিএসসি ২০১৭ বিসিএস পরিক্ষার ফল প্রকাশকে কেন্দ্র করে পরিস্কার দুর্নীতির অভিযোগ উঠেছে পশ্চিমবঙ্গ পাবলিক সার্ভিস কমিশনের বিরুদ্ধে। একদিকে যেমন যোগ্য ছেলেরা উচ্চ শিক্ষার সঠিক পরিবেশে পাচ্ছে না এবং ঠিক তার উল্টো দিকে বহু কষ্ঠে উচ্চ শিক্ষা অর্জন করলেও তাদের মেধার প্রতি সুবিচার করা হচ্ছেনা। বেকারত্বের প্রশ্নে কেন্দ্রে এবং রাজ্য কেউই তাদের প্রতিশ্রুত পালন করতে পারেনি। শিক্ষিত বেকারদের সঠিক কর্ম সংস্থানের পরিবর্তে নির্লজ্জের মত কখনো কখনো বলা হচ্ছে চপ ও পকোড়া শিল্পের কথা, এর চেয়ে হাস্যকর কথা আর কি হতে পারে। আসলেই শিক্ষিত বেকারদের ব্যপারে কোন ভাবনা ও পরিকল্পনা না থাকার করনেই এই অবান্তর কথাবার্তা শুনতে হচ্ছে।
এমতাবস্থায় হয়তো অধিকার আদায়ের জন্য সংগ্রাম ছাড়া দ্বিতীয় কোন পথ খোলা নেই!!!