
ইমরান হোসেন
‘মূল্যবোধ’ শব্দটা শুনতে খুব ছোট্টো হলেও ওজন খুব বেশি। যখন নৈতিকতা ও মূল্যবোধের পরোয়া না করে খেয়ালখুশির অনুসরণ করা হয় তখন সেই অবস্হাকেই ‘অসামাজিক’ বলে আখ্যায়িত করা হয়।আর মানুষ যখন এই নৈতিকতার সকল প্রকার সীমা অতিক্রম করে তখন ‘অসামাজিক’ হয়ে উঠে।
মানুষের বিপরীত লিঙ্গের প্রতি আকর্ষন এককথায় নিশ্বাস নেওয়ার মতই সত্য ও প্রয়োজনীয় । আর এই জন্যই পুরুষ ও নারীর মধ্যে ‘বিবাহ’ নামক একটি সুন্দর ও পবিত্র প্রতিষ্ঠানের সৃষ্টি। একটি পুরুষ ও নারী নিজেদের পছন্দসই সঙ্গী নির্বাচন করে বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হয়। এবং এই দুনিয়ার সৌন্দর্য বৃদ্ধিতে সহযোগিতা করে।এইভাবেই মূল্যবোধ ও নৈতিকতার উপর ভিত্তি করে একটি সুস্থ ও স্বাভাবিক সমাজ গড়ে উঠে।
বিবাহের সম্পূর্ণ উল্টো একটি সম্পর্ক হল “পরকীয়া” যা মানুষের মধ্যকার মূল্যবোধ ও নৈতিকতাকে নির্মূল করে দেয়। পরকীয়া সম্পর্কে মানুষ বিয়ে না করে বিয়ের স্বাদ গ্রহণ করতে চাই যা ডানাওয়ালা পিঁপড়ের আগুনের দিকে ছুটে চলার সাথে তুলনা করা যেতে পারে।
এটি এমন একটা কুৎসিত অপরাধ যা সুপ্রিম কোর্টের বৈধতার পরও মানুষ জনসমক্ষে স্বীকার করতে লজ্জা পাবে। সুতরাং একজন পরকীয়া প্রেমীর সামাজিক ভয় থেকেই তার অপরাধ প্রবনতা ঠাওর করা যায়।
এই পরকীয়া নিয়ে দেশের প্রধান বিচারালয়ের রায় অনেকটা ‘ম্যাকবেথে’র “fair is foul and foul is fair” এর মত। যেখানে ঠিক আর ভুল উলটপালট হয়ে গেছে। কোনটা অপরাধ আর কোনটা অপরাধ নয় তা বোঝা কঠিন।
৪৯৭ ধারার আইন অনুযায়ী কোনো ব্যক্তির পরকীয়া প্রেমের জন্য পাঁচ বছরের জেল ও জরিমানা হতে পারত। কিন্ত এই কুৎসিত কর্মকান্ডে জড়িত স্ত্রীলোককে অপরাধী সাব্যস্ত করা হত না। সেইদিক থেকে দুইজন অপরাধীর মধ্যে শুধুমাত্র পুরুষই শাস্তি পেত। সুপ্রিম কোর্ট ৪৯৭ ধারা সংশোধনের মাধ্যমে পরকীয়া প্রেমী পুরুষকেও নিরপরাধ ঘোষনা করেছে। এখন প্রশ্ন হল দেশের প্রধান বিচারালয় পুরুষ ও নারীর অধিকারের বৈষম্য দূর করার নামে কিভাবে সেই ঘৃণ্য কর্মে জড়িত পুরুষকে নারীর মত নির্দোষ ঘোষনা করতে পারে! এই ক্ষেত্রে পুরুষদের মত নারীদেরও অপরাধী ঘোষনা করাই সমীচীন ছিল। কিন্ত তা না করে প্রধান বিচারালয় এই অসামাজিক কর্মের বৈধতা ঘোষনা করেছে যা দেশীয় মূল্যবোধের চরম বিপর্যয়।
এছাড়া রায়ের একটি বিশেষ অংশে বলা হয়েছে পরকীয়ার মত বিষয়ে রাষ্ট্রের অনুপ্রবেশ অনধিকার। বিষয়টি অতি সহজ এবং প্রত্যাশিত বটে।
ব্যক্তির আভ্যন্তরীণ বিষয়াদিতে রাষ্ট্রের নিয়ন্ত্রণ অনাকাঙ্খিত এবং ব্যক্তিত্ব বিকাশের বিরোধি। কিন্ত যখন কোনো বিষয় পারিবারিক জীবনে তথা সামাজিক স্তরে চরম বিশৃঙ্খলার সৃষ্টি করে সেই ক্ষেত্রে সকলের অধিকার রক্ষা ও ভারতীর পরিবারতন্ত্রের অক্ষুণ্ণতার জন্য দেশ তথা আইনের শাসনের প্রয়োগ আবশ্যিক।
আর এই জন্যই দেশের প্রশাসন, আইন ও বিচার ব্যবস্থার প্রতিষ্ঠা করা হয়ে থাকে।
পরকীয়ার মাধ্যমে যে শুধুমাত্র কয়েকটি অসৎ প্রানী নৈতিকতার সীমা অতিক্রম করে তা নয়, বরং পরিবারের বাকি সদস্যদের সার্বিক অধিকার ও শান্তি চরম ভাবে বিঘ্নিত হয়। যার ফলে আমরা প্রত্যহ সংবাদপত্রে দেখি পরকীয়ার ফলে ঘটে যাওয়া হিংসা, মৃত্যু এবং আত্মহত্যা।
এই সংশোধিত আইনে ব্যক্তির “যৌন স্বেচ্ছাচারিতা”র কথা উল্লেখিত হয়েছে যা দেশীয় সমাজ ব্যবস্থার জন্য একটি ঐতিহাসিক ভুল সিদ্ধান্ত তা প্রমান হওয়া শুধুমাত্র সময়ের অপেক্ষা।
বেশী পাওয়া ও উপভোগ করার লোভ মানুষের জন্মগত ও সহজাত প্রবৃত্তি। সুতরাং এই বেশী উপভোগের জন্য মানুষ নিকৃষ্টতম অপরাধ করতেও পিছপা হয়না। এই জন্যই “যৌন স্বেচ্ছাচারিতার” কথা পরিবার ও বৈবাহিক সম্পর্কে যে ধ্বংস ডেকে আনবে তা বলার অপেক্ষা রাখেনা।
Americn Psychological Association(APA) এর রিপোর্ট অনুযায়ী এই “যৌন স্বেচ্ছাচারিতা”র ফলেই পশ্চিমাদের ৫০ শতাংশের বেশী পরিবার ডিভোর্সের স্বীকার। এবং উইকিপিডিয়া বলছে এই ডিভোর্সের কারন বিবাহ বহির্ভূত সম্পর্ক। National Alliance on Mental Illness(NAMI) এর রিপোর্ট বলছে পশ্চিমাদের এই পরীবারহীন জীবন যাপনের জন্য প্রতি পাঁচ জনে একজন মানসিক রোগগ্রস্ত।
দেশার প্রধান বিচারালয়
সুপ্রীম কোর্টের এই পরকীয়া সংশোধিত আইন অচিরেই ভারতীয় সমাজ ব্যবস্থাকে পশ্চিমী দুনিয়ার ধাঁচে তৈরি করবে। এবং আমাদের দেশের পরিবার গুলোও যথেচ্ছ ডিভোর্সের স্বীকার হবে, সামাজিক সুখ ও শান্তি বিঘ্নিত হবে এবং উৎপাদিত হবে “যৌন স্বেচ্ছাচারিতার”র প্রত্যাশিত ফসল মারন রোগ AIDS।
লেখক- ছাত্র, কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়