গল্প

সম্পর্ক

541views

তারপর

আমরা সচারাচর খবরের কাগজে তথা বিভিন্ন মিডিয়াই  মেয়েদের শ্লীলতাহানীর কথাই জানতে পারি। এর মানে কিন্তু এই নয় যে, ছেলেদের শ্লীলতাহানীর ঘটনা ঘটেই না বা খুব কম ঘটে। আসলে এটা এমন এক স্পর্শকাতর বিষয় যে তা অধিকাংশ ছেলেরা ওটা মজা করে  উপভোগ করে- নির্লজ্জের মত।

একটু পর বাস চলতে চলতে যখন আমাদের হিজলতলীর মোড় পার হল তখন রাস্তা খুব খারাপ শুরু হল। এই খারাপ রাস্তাই অন্তত পাঁচ কিমি এই ভাবে যাবে। এই রাস্তায় মাঝে মাঝে এমনই খাদ-গর্ত আছে যে, গাড়ি যখন ঐ সব গর্তে পড়ছে তখন গোটা গাড়ির সব লোকেরই  একে অপরের সাথে  ঠেলা-ধাক্কা লাগছে। হঠাৎ রামচন্দ্রপুর মোড়ের কাছে যেই বাস থেমেছে আর অমনি চেল্লাচেল্লি শুরু হয়ে গেল।  সবাই বলছে- “এই বোরখা পরা মেয়েটা!”, “বোরখা পরা মেয়েটা! ধরো ওকে, বাঁধো –খুলে ফেলো ওর বোরখা!”

এমন কথা শুনে কি আর চুপ করে থাকা যায়! আমি দ্রুত এগিয়ে গেলাম মেয়েটির দিকে। দেখি তো ব্যাপারটা কি হয়েছে? বাস দাঁড়িয়ে আছে এখন। এবার যা বুঝতে পারলাম তা হল ঐ বোরখা পরা মেয়েটি আসলে একটি পকেটমার। সে এই ভিড় বাসের ভিতরে ধাক্কাধাক্কির বাহানায় পকেট মারার কাজ চালিয়ে যাচ্ছিল। আর তাতেই সে ধরা পড়ে যায়। লক্ষ্ করে দেখলাম  গোটা চার-পাঁচেক লোক মেয়েটাকে মারার জন্য উদ্যত হয়েছে-লোকগুলোর  মেজাজ দেখলাম সত্যি কঠিন উগ্র! মেয়েটির উপর তারা চড়াও হয়ে গেল। আমি ভালো করে ব্যাপারটা আঁচ করার চেষ্টা করলাম-প্রকৃত ব্যাপারটা কী ? দেখলাম লোকগুলি এই মেয়েটিকে কেন্দ্র করে ইসলামের পোষাক নিয়ে তথা পুরো মুসলিম কওম নিয়েই বাজে কমেন্ট করতে লাগল। আমার খুবই খারাপ লাগতে লাগল-এটা বড় অন্যায় । লোক গুলির মধ্যে একটি  টাকলু মাথা লোক তার জাঁদরেলে হাত দিয়ে মেয়েটির গালে টেনে চড় কষল। তার পর বলল-“খোল শালি তোর বোরখা-আজ তোর মজা দেখাচ্ছি দাঁড়া!”

একথা শুনে আমার গা শিউরে উঠল। মনে মনে ভাবলাম যে, হায় আল্লাহ কি যে হবে –চোর হলেও তো সে মানুষ । হতে পারে অসহায় –পেটের জ্বালায় ক্ষুধার জ্বালা সয়তে না পেরে এই অসৎ পথে নেমেছে। ভয় হচ্ছিল আমার এই উগ্র মেজাজের লোকগুলি একে না শেষ মেষ সেই জুনাইদ মারা করে মেরে না ফেলে।

টাকলু মাথার লোকটি মেয়েটিকে আবার আরেক চড় কষল একেবারে অসম্ভব জোরে। এই চড় সামাল দেওয়ার জন্য মেয়েটি নিজের হাত নিজের গাল সোজা আড় করে ধরতেই লোকটির হাতের কিল মেয়েটির হাতে লাগল খুব জোরে । সঙ্গে সঙ্গে মেয়েটির হাতের সাদা শাখা ভেঙে চুর চুর হয়ে গেল মাটিতে। সেই সঙ্গে টাকলু লোকটাও মেয়েটির মাথায় দেওয়া কালো নিকাবটি এক টানে খুলে ফেলে। আরে সর্বনাশ!  একি! মেয়েটির সিথিতে যে সিঁদুর ঝকঝক করছে!

আমি এতক্ষণ পরে সব থেকে অবাক হলাম ঐ উগ্র আর বদ মেজাজী লোকগুলির কান্ড দেখে।  দেখলাম ঐ মেয়েটিকে মারার জন্য তারা বড়ই অনুতপ্ত ও লজ্জিত। তারা মেয়েটির কাছে নতজানু হয়ে ক্ষমা চায়ল। জানিনা এরা একে অপরের প্রতি এক দন্ডের মধ্যে কী এমন সম্পর্ক আবিস্কার করল!

 

মুহাঃ মইদুল ইসলাম

 

Leave a Response