প্রস্তুতি

সমস্যা ও সমাধান

994views

মুহাম্মদ নুরুদ্দিন

জীবন মানে সমস্যা আর সংকট। সমস্যা নেই এমন মানুষ পৃথিবীতে বিরল! এক একজন মানুষের এক এক রকম সমস্যা । বিভিন্ন সমস্যার ধরন ধারণ, প্রকৃতি, গভীরতা ভিন্ন ভিন্ন। সমস্যা কখনো ব্যক্তিগত হয়, কখনো সমষ্টিগত হয়। সমস্যা কখনো রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক, সামাজিক আবার আন্তর্জাতিক সমস্যার আগুনে অনেক সময় ব্যক্তিগত জীবনকে ছারখার হতে দেখা যায়। সমস্যার চরিত্র যেমন বহুমুখী তার সমাধানের প্রকৃতিও বহুমুখী। বহমান আলোচনায় আমরা ছাত্র জীবন ও নব যৌবন পর্যায়ের কিছু ব্যক্তিগত সমস্যা নিয়ে আলোচনা করব। এই সমস্যাগুলি ব্যক্তিগত পর্যায়ের হলেও অনেক সময় তা সমষ্টিক রূপ পরিগ্রহ করে। সমস্যাগুলী উল্লেখের পাশাপাশি অভিজ্ঞতার আলোকে কিছু সমাধানের রেখাপাত করাই এই নিবন্ধের লক্ষ্য।

আমরা ছাত্র ছাত্রীদের নিকট থেকে প্রায় ই শুনে থাকি “পড়া মুখস্ত হয়না, এতো পড়ি তবুও রেজাল্ট ভাল হয় না”। প্রায় ই শোনা যায় ‘এতো ভালো পরীক্ষা দিলাম কিন্তু এরকম রেজাল্ট হবে ভাবতেই পারিনি। কিসে যে কি হলো ভেবেই পাচ্ছিনা। ছাত্র ছাত্রীরা সবসময় পরীক্ষা ভালো দেয় বা মোটামুটি ভালো দেয়। কিন্তু রেজাল্ট বের হলে প্রায় সকলেই রেজাল্ট অসন্তুষ্ট হয়। তাদের কাছ থেকে প্রাপ্ত রেজাল্ট হয় অপ্রত্যাশিত। শিশু কিশোরদের খাবার খাওয়া নিয়ে আজকাল নানান সমস্যার কথা শোনা যাচ্ছে। মায়েদের খেদ বাচ্চারা খেতে চায়না। শিশুদের ধনুক ভাঙ্গা পণ ‘খাবো না। অনেকে আবার আগ বাড়িয়ে বকে “সবসময় খেতে হবে তার কি মানে আছে ?” আবার সেই শিশু কিশোরদের জাঙ্ক ফুড বা চকলেট টাইপের খাবার অতিরিক্ত টান। এধরনের সমস্যায় জর্জরিত নয় এমন পরিবার খুঁজে পাওয়া ভার

কিশোরোত্তর বা প্রাক যৌবন বয়সের একটা মানসিক সমস্যা অনেক সময় জীবনকে জটিল করে তোলে। এই বয়সের ছেলেমেয়েদের সঙ্গে সচেতন ভাবে আচরণ না করলে তার প্রভাবে এমন ক্ষতি হয়ে যেতে পারে যার ফল হয়তো সারা জীবন বয়ে বেড়াতে হয়। এই বয়সে ছেলেমেয়েরা হয় অনেক বেশি অভিমানী। তাদের প্রায় ই মনে হয় পরিবারে তাকে কেউ গুরুত্ব দেয়না, তাকে কেউ ভালবাসেনা। সে সব সময় একটা হীনমন্যতা য় ভোগে। তার মনের কথা কারো সঙ্গে শেয়ার করতে সে ভয় পায়। কোনোভাবে তার কথা বিদ্যালয়ে বা বাড়িতে বলতে চাইলে প্রায় ই কেউ তাদের কথায় গুরুত্ব দেয়না। এই সময় তাদের মান অভিমান জন্ম নেয়। সে ভাবতে চায় তাকে কেউ বুঝতে চায় না। ‘ভালো লাগে না কথাটি এই বয়সে র একটা কমন শব্দগুচ্ছ। এই ভালো না লাগার পেছনে যে মনস্তত্ব লুকিয়ে আছে তা খুঁজে বের করা সত্যিই সমস্যার।

কৈশোবের উথাল তরঙ্গ মালা পার হয়ে মানুষ যখন সংসার জীবনে পদাপর্ন করে তখন সে এসে পড়ে অনেকগুলি বাস্তব সমস্যার মুখোমুখি । জীবনের এই পর্যায়ের সমস্যাগুলো অপেক্ষাকৃত কঠিন।

পিতা মাতাকে প্রায় ই মেদোক্তি করতে শোনা যায় – ছেলে মেয়েরা কথা শোনেনা। এটা যেমন একটা সাধারণ সমস্যা তেমনি কোন কথাটা তাদেরকে বলতে হবে, জীবনের গতিপথ কোনদিকে নিয়ে যাওয়ার জন্য তাদেরকে কী ধরনের গাইড দিতে হবে তা নিয়ে বাবা মায়েরা নিজেরই দ্বিধা দ্বন্দ্বে থাকে । একদিকে ক্যারিয়ার অপরদিকে চরিত্র। বাবা মা তাদের সমস্ত স্বপ্ন তাদের একটি বা দুটি সন্তানের মাঝে দেখতে চায়। তাদের প্রত্যাশায় পাহাড় একদিকে অন্যদিকে থাকে সন্তানের সীমিত ধারণ ক্ষমতা। এই প্রাপ্তি আর প্রত্যাশার ব্যবধানে জীবনকে অনেক বড় প্রশ্নের সম্মুখে দাঁড় করিয়ে দেয়।

যারা ইসলামী আন্দোলনের সঙ্গে যুক্ত তাদের সমস্যার পরিসর আরও বড়। ইসলামী সংগঠন সব সময় তার কর্মীদের সার্বিক সহযোগিতা প্রত্যাশা করে। সংগঠনের চাহিদা আর সন্তানের ক্যারিয়ার গঠনের দ্বন্ধ এসে যখন মুখোমুখি হয়ে দাঁড়ায় তখন সেই কর্মীর ফাঁদে তা যায় দাঁড়ায় এক বিব্রতকর পরিস্থিতি।

সমাধান:

উপরোক্ত আলোচনায় জীবনের বহুমুখী সমস্যার ব্যাপারে সামান্য আলোকপাত করা হলো। এবার সংক্ষেপে সমাধানের পথের দিকে দৃষ্টি ফেরানো যাক।

নিরাশ হবেন না:

পৃথিবীর যাবতীয় সমস্যার প্রধান ওষুধ আশাবাদ সমস্ত সমস্যার সমাধানের মালিক আল্লাহ। খোদ আল্লাহ রব্বুল আলামীন মানুষকে নিরাশ হতে নিষেধ করেছেন। সূরা  যুম আর এর ৫৩ নম্বর আয়াতে আল্লাহ বলেন, ‘লা ‘ তাকনাতু মির রহমাতুল্লাহ। অর্থাৎ আল্লাহর রহমত থেকে তোমরা নিরাশ হয়োনা। হতাশ হয়ে পড়া মন ভাঙ্গা হয়ে যাওয়া সমস্ত সমস্যার মূলে। সুতরাং সর্ব প্রথম মন থেকে হতাশা ঝেড়ে  ফেলার চেষ্টা করতে হবে। হতাশা কিং কর্তব্য বিমুখতা মস্তিষ্কে নেতিবাচক প্রভাব ফেলে যা আরো সমস্যার জন্ম দিতে পারে।

চলবে…

Leave a Response