মুহাম্মদ নুরুদ্দিন
তারপর
সমাধান নিয়ে ভাবুন: তাই জীবনে কোন সমস্যার মুখোমুখি হলে সমস্যা নিয়ে নয় সমাধান নিয়ে ভাবতে হবে বেশি । সমস্যাটা কেন হলো তা নিয়ে যতই ভাবতে যাবো ততই জটিলতার মধ্যে আটকে পড়ে যাবো। তাই মনে সমস্যাকে গুরুত্ব না দিয়ে সমাধান কে গুরুত্ব দিতে হবে। মনে রাখতে হবে সমস্যা জীবনের অঙ্গ। সমস্যা না থাকলে জীবন অর্থহীন । সমস্যা আছে বলেই সমাধানের দিগন্ত উন্মোচিত হয়। সমস্যার সামনে এসে পথ আটকায় বলে নিত্য নতুন আবিষ্কার জীবনে চলার পথকে সুগম করে ।
দ্রুত পদক্ষেপ: সমস্যা সমাধানের অন্যতম একটি সোপান হলো যথা শীঘ্র পদক্ষেপ গ্রহণ করা। কোনো সমস্যা বুঝতে পারার পর এক মুহুর্ত দেরি করা অনুচিত। ইবনে উমর রাদী: বলতেন, “তুমি যখন সন্ধ্যা যাপন করো তখন ভোরের প্রতীক্ষা করবে না । আর যখন তুমি ভোর পেয়ে যাবে তখন সন্ধ্যার অপেক্ষা করবে না। আর তোমার সুস্থবস্থায় রোগের জন্য প্রস্তুতি গ্রহণ করো এবং তোমার জীবন কালে মৃত্যুর জন্য প্রস্তুতি গ্রহণ করো”। এই উপদেশ সেই প্রবাদ বাক্য কে স্মরণ করিয়ে দেয় “হিট দ্যা আইরণ হোয়েন ইট ইজ হট” অর্থাৎ গরম থাকতে থাকতেই লোহায় ঘা মারো।
কারণ অনুসন্ধান করো: যেকোনো সমস্যার সমাধানে তার উৎস খুঁজে বের করা র চেষ্টা করা। আমরা সাধারণত চটজলদি সমাধান পেতে চাই। ফলে সমস্যার গভীরে না গিয়ে আমরা উপর থেকে একটা প্রলেপ দিয়ে মিটিয়ে ফেলার চেষ্টা করি। কিন্তু এতে হিতে বিপরীত হয়।
ধরুন আপনার শিশু কয়েকদিন বিদ্যালয়ে যাওয়ার পর আর সে বিদ্যালয় যেতে চায়না। আমরা সাধারণত শিশু কে বকাবকি করি, মারধর করি, অথবা পারতপক্ষে কোনো খাবার বা খেলনার লোভ দেখিয়ে তাকে বিদ্যালয়ে পাঠাই। হয়তো তার স্কুল ভীতির কারণ লুকিয়ে আছে অন্যত্র। আমরা সেটার সন্ধান না করে অন্যপথ গ্রহণ করায় মূল সমস্যা ধামাচাপা পড়ে গেলো। হয়তো বিদ্যালয়ের কোনো শিক্ষককে সে ভয় পেয়ে ছিল অথবা কোন সহপাঠীর সঙ্গে তার কোনো ঝামেলা হয়েছিল, এটা নিছক উদাহরণ মাত্র। এরকম অনেক কিছু থাকতে পারে যেটা বোঝার চেষ্টা করলে হয়তো অনেক বোরো বিষয় আমাদের সামনে উঠে আসতো। সে জন্য যেকোনো সমস্যার গভীরে গিয়ে তার গোড়ায় পৌঁছানোর চেষ্টা করতে হবে। নইলে যতই ওষুধ খাওয়ানো হোক কেন নিয়মিত ঠান্ডা লাগাতে থাকলে কখনো রোগীর সর্দি কাশি সারবে না।
চাপ নেবেন না: সমস্যা সমাধানের পরবর্তী ধাপ হচ্ছে সবকিছু সহজভাবে গ্রহণ করা। কোনো সমস্যা দেখেই ঘাবড়ে গিয়ে হা হতাশ করতে থাকলে সমস্যা বাড়ে বই কামনা। তাই যেকোনো সমস্যাকে সহজ ভাবে গ্রহণ করতে হবে। বিচার বিশ্লেষণের পর আমার যা করনীয় তা আমাকে করতে হবে। বাকিটা ছেড়ে দিতে হবে আল্লাহর হাতে।
যদি আপনি অসুস্থ হন তাহলে ডাক্তারের কাছে যাওয়া , ডাক্তারের পরামর্শ অনুযায়ী পরীক্ষা নিরীক্ষা করা, ঔষধ খাওয়া এটা আপনার কাজ, এ কাজে অলসতা করলে আপনার বিপদের জন্য আপনি দায়ী ।কিন্তু এ কাজ গুলি সম্পন্ন করার পর আপনার মাথা থেকে উদ্বেগ উৎকন্ঠা বিসর্জন দেওয়া উচিৎ। আমরা করি ঠিক এর উল্টোটা । যেটা করনীয় সেটা না করে আমরা আবেগ উচ্ছ্বাসে ভেসে যায় । হ্যাঁ হুতাশ করে সমস্যা কে আরো বাড়িয়ে ফেলি।
সব দিক খতিয়ে দেখুন: অংক করার সময় যেমন একভাগে সমাধান না হলে সম্ভাব্য সকল দিক দিয়ে চেষ্টা করতে হয়, তেমনই যেকোনো সমস্যা সমাধানের সব রকম পন্থা অবলম্বন করতে হবে। আপনি নিজে না পারলে বন্ধু বান্ধবের সাহায্য নিন, গুরুজনের পরামর্শ নিন কিন্তু শেষ দেখে ছাড়ুন। সহজে হাল ছাড়বেন না।
ইতিবাচক ভাবুন: ইতিবাচক ভাবে ভাবতে শেখাও সমস্যা সমাধানের বড়ো একটা উপায়। এপিজে আব্দুল কালাম প্রায় ই বলতেন, আপনি ফেল করেছেন মানে সব শেষ হয়েগেছে তা নয় বরং আপনি নিজেকে প্রমাণ করার আরেকটি সুযোগ পেয়েছেন । এর নাম ইতিবাচক ভাবনা। নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর বিখ্যাত হাদীস নিশ্চয় সবার জানা আছে, “তিনি এক ব্যক্তির সম্পর্কে জান্নাতের সু সংবাদ দিলেন। সে ব্যক্তির অন্য তেমন কনো বিশেষ গুণ ছিল না। কিন্তু তিনি অন্যের ব্যাপারে সব সময় ইতিবাচক ধারণা রাখেন। ইতিবাচক ধারণা অনেক সমস্যার সমাধান পেশ করে”।
আল্লাহর সাহায্য চাও: আল্লাহর সাহায্য ছাড়া পৃথিবীতে কিছুই হয়না। আমরা আমাদের ব্যক্তিগত, পারিবারিক, সামাজিক বা সাংগঠনিক যে সমস্যায় পড়ি নাকেনো নিজের পক্ষ থেকে যা করার ত করতে হবে এবং কাতর কন্ঠে সাহায্য চাইতে হবে আল্লাহর কাছে। আল্লাহর প্রতি নির্ভরশীলতা পার্থিব জীবনে ইমানদারদের জন্য এমন এক সম্পদ , যার সঙ্গে পৃথিবীর কেনো সম্পদের তুলনা করা যায়না। আপনার অভিমানী মন আশ্রয় খোঁজে । কেউ আপনাকে ভালোবাসে না, কেউ আপনাকে গুরুত্ব দেয় না, আপনার মনের কথার শোনার কেউ নেই। দুঃখ ভারাক্রান্ত মন আপনাকে সব সময় বিষন্ন করে রাখে ঠিক এই জায়গায় প্রশান্তির চুড়ান্ত ঠিকানা ‘জায়নামাজ’ । দুনিয়ার সব কিছু থেকে মুখ ফিরিয়ে একনিষ্ঠ মনে নিবিড় ভাবে লুটিয়ে পড়েন সিজদা য়। অশ্রুসজল নয়ণে মনের সব কথা উজাড় করে দেন মহান প্রভুর দরবারে। দেখবেন আপনি অনেক হালকা হয়ে গেছেন। আপনার হৃদয় প্রশান্ত হয়েছে। আপনার আর কোনো রাগ দুঃখ অভিমান নেই। তাই সমস্যা সমাধানের জন্য মহান প্রভুর দরবারে নিজেকে উজাড় করে দিতে হবে। সব সমস্যার সমাধান যার হাতে নিশ্চয় তিনি আপনাকে নিরাশ করবেন না।