সম্পাদকীয়

পুলিশের নিরপেক্ষতা

373views

পশ্চিমবঙ্গে এখন জোর যার মুলুক তার অবস্থা। সেইসঙ্গে জনগণের নিরাপত্তা দেওযার দাযিত্বে থাকা রাজ্যের পুলিশ বাহিনীর অবস্থা আরও করুণ। নিরপেতা খুঁইযে শাসক দলের লেজুরবৃত্তি করছে পশ্চিমবঙ্গের পুলিশ। পুলিশ যতই নিরপেক্ষতা হারিয়ে একপেশে হচ্ছে, রাজ্যে পরিস্থিতি ততই ভয়াবহ হচ্ছে। সাম্প্রতিক পুর-পঞ্চায়েত ভোটে পুলিশের ভূমিকা একেবারেই উদ্বেগজনক। পুলিশ যদি নিরপেক্ষ চরিত্র বজায রাখতে পারত, তাহলে পশ্চিমবঙ্গ এতটা ভয়াবহ হয়ে উঠত না। বিরোধীদলের মিছিলে পুলিশি বাহাদুরি মটেও পশ্চিমবঙ্গে নতুন নয়। বামফ্রন্টের জামানায় পুলিশ বামফ্রন্টের লেজুড়বৃত্তি করেছে। এখন করছে তৃণমূলের। বিরোধী নেত্রী থাকাকালীন মমতা বন্দ্যোপাধায় পুলিশের বিরুদ্ধে কম বিষোগার করেননি। কিন্তু, মুখ্যমন্ত্রী হয়ে মমতা মোটেও পুলিশকে জন-বান্ধব করে তুলতে পারেননি। এটা তাঁর চরম ব্যর্থতা। পুলিশকে সরকারি নিয়ন্ত্রণ মুক্ত করার প্রস্তাব দীর্ঘদিন থেকে উটছে। কিন্তু, দেশের কোনও রাজ্যই এ নিয়ে ভাবতে রাজি নয়। পুলিশের এই অনিরপেক্ষ চরিত্রের জন্য কতই হয়রানির শিকার হয়েছেন রাজ্যের বর্তমান মুখ্যমন্ত্রী! সেকথা ভুলে গেলে চলবে না। তাছাড়া পশ্চিমবঙ্গ পুলিশ কেন বুঝতে পারছে না, তাঁদের বিশ্বাসযোগ্যতা, গ্রহণযোগ্যতা আজ দিন দিন তলানিতে গিয়ে ঠেকছে। পুলিশ কেন ভুলে যায়, একমাত্র তাঁদের উর্দিতেই রয়েছে জাতির স্বাভিমানের প্রতীক অশোক স্তম্ভ। পুলিশের উচিত, এই অশোক স্তম্ভের মান রক্ষা করা। তবে পুলিশের সবাই একই পথের পথিক, আমরা তা বিশ্বাস করি না। পুলিশ বাহিনীতে নিশ্চিতভাবে সত- নির্ভীক মানুষ রয়েছেন। কিন্তু, এখন এরা কোণঠাসা হয়ে পড়েছেন। শাসক দল কেন বুঝতে পারছে না, আজ না হয় কাল ক্ষমতা থেকে সরে যেতে হবে। তিন দশক পর সিপিএম নেতৃত্বাধীন বামফ্রন্টকে মতা থেকে সরে যেতে হয়েছে। তাই, ক্ষমতার জোরে যদি তৃনমূল সরকার টিকে থাকতে চাই, অদূর ভবিষ্যতে বামফ্রন্টের মত অবস্থা হবে তাঁদের। তাই শ্রেয়, অতীতের ভুল থেকেই শিক্ষা গ্রহণ করা। অসমের শিলাচরেও পুলিশের বিশ্বাসযোগ্যতা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে। গো-মাংস কান্ডে কাছাড়ে যে অপ্রীতিকর পরিস্থিতি তৈরি হল, তা সামাল দিতে পারেননি কাছাড় পুলিশ। এমনকি কাছাড়ের ময়নাগড়ে দুর্ঘটনার জেরে চালককে নৃশংস ভাবে হত্যা করার করারা পিছনেও পুলিশের ভূমিকা সন্তোষজনক ছিল না। ইদানিং উত্তরপ্রদেশের বারাণসীতে পুলিশের ভূমিকা যথাযথ ছিলনা বলেই পরিস্থিতি আরও উত্তপ্ত হয়েছে। এ নিয়ে আন্তরিক ভাবে চিন্তাভাবনা করতে হবে। পুলিশকে প্রথমেই আত্মসমালোচনা করতে হবে। রাজনৈতিক দলের লেজুরবৃত্তি ছাড়তে হবে। পুলিশ আমাদের সমাজ ব্যবস্থার অবিচ্ছেদ্য অঙ্গ। একটি অঙ্গ খারাপ হতে থাকলে শরীরের যেমন কষ্ট হয়। ঠিক তেমনই পুলিশ ভালো না থাকলে গোটা সমাজ, গোটা রাজ্য, গোটা দেশ চিন্তিত হয়ে পড়ে। সাধারণ মানুষদেরও বান্ধব বলে মনে করতে হবে পুলিশকে। কিন্তু, পুলিশকেও সেই পরিবেশ তৈরি করতে হবে। নইলে পুলিশের যে ভাবমূর্তি সংবাদমাধ্যমে প্রকাশিত হচ্ছে, সম্প্রচারিত হচ্ছে, তা দেখে সাধারণ মানুষ আরও আতঙ্কিত হবেন। এটাই স্বাভাবিক।

Leave a Response