আবু রাইহান
তারপর
মনে রাখিস তোকে আমি পীরের সামনে নিয়ে গিয়ে হুজুর কেবলা কে সাক্ষী রেখে শাদি করেছি। আর তুই মাগি এখন গাছ পাথরের তলে মাথা ঠিক আছে। তওবা পর হারামজাদি। নিজের ভালো চাইলে আওয়াল কলেমা পড়ে ছতর এ ফু দে। আর ছোট রে প্রসঙ্গ আসতেই যৌন আকাঙ্ক্ষার পুনরপাঠ। নিশিন্দার মনে পরে ব্রাহ্মণবাড়িয়া থানার পুলিশ 15 দিন আগে তার বাড়ি তছনছ করে যখন জিজ্ঞেস করছিল এই মাগি আব্দুল্লাহ কই? তখন দারোগার টর্চটা ছিল নিশিন্দার বুকের ওপর স্থির। আর সে কারণেই নিশিন্দা কে বলতে হয়েছিল আগে ছতর থেকে বাতি নামান দারোগা সাব, আব্দুল্লাহ কি আমার বুকের ভেতর লুকিয়ে আছে নাকি, বাতি নামান। আর এভাবেই উপন্যাসটি বিভিন্ন অনুষঙ্গের শিল্পী ও পরিমিত ব্যবহারই পাঠক কে ক্রমাগত মহৎ সাহিত্য পাঠের এক অনুভূতিতে পৌঁছে দেয়। উপন্যাসটিতে সংখ্যা দিয়ে অধ্যায় বা পরিষদগুলোর পৃথকীকরণ হয়নি। উপন্যাসের দ্বিতীয় পর্ব দেখা যায় নদীর দিকে লোকজনের কোলাহল বাড়ছে। এক সময় পুলিশ বাড়িতে এসে নিশিন্দা কে জেরা করতে এসে জানায় আব্দুল্লাহ গত রাতে খুন হয়েছে। তার লাশ নদীর কলমি ঝোপে পড়ে আছে। এমন পরিস্থিতিতে কারা কারা আব্দুল্লাহ কে খুন করতে পারে বলে তুই সন্দেহ করিস, দারোগার প্রশ্নের জবাবে নিশিন্দা বলেছিল আমার সবাইকে সন্দেহ হয়। পুলিশ গাই গরুর মালিক আর আব্দুল্লাহর সঙ্গী সবাইকে।সবকিছু শেষ করে নিশিন্দা যখন রাতে খিদে নিয়ে বিছানায় শুয়ে আছে তখন তার কানে বাজে আগের রাতে বা খানের রাখালের কন্ঠ থান। অবচেতনে আকাঙ্ক্ষা মাথাচাড়া দিয়ে উঠতে চায়। সেই সাথে আব্দুল্লাহ স্মৃতি ও এসে ভিড় করে। এমন সময় আসে খলিল আব্দুল্লাহর পার্টির সংগী। ভালো মানুষের আবরণে আব্দুল্লাহর হাতিয়ার গুলো নিয়ে যেতে চায় খলিল। কিন্তু নিশিন্দার দৃঢ়তার পরিচয় যেন এ সময়ই। তর্কাতর্কির এক পর্যায়ে খলিল পিস্তল বের করলে নিশিন্দা রামদার আঘাতে একটা আঙ্গুল হারিয়ে তাকে ওই বাড়ি থেকে পালিয়ে বাঁচতে হয়। শেষ পর্যন্ত দারোগার সাথে সাক্ষাতে 1 লাখ টাকার বিনিময়ে নিশিন্দা বাড়ি ছেড়ে চলে যাবে। আর ইটভাটার ম্যানেজার ওদের বাড়ির জায়গায় নতুন ভাটা বসাবে। নিশিন্দার মনে হল সে একটা ক্ষুধার্ত বাঘিনী। যে করেই হোক তার বেঁচে থেকে দুনিয়ার উপর প্রতিশোধ নিতে হবে। হার মানবে না আব্দুল্লাহর খুনি শহরের জোরদার ইটভাটার মালিক আর গুপ্ত পার্টির ছদ্মবেশধারী রাজনৈতিক ডাকাতদের কাছে। রাতে ইটভাটার ম্যানেজার এলে সাথে আমি মাত্র 30 হাজার। নিশিন্দা সেই টাকাটাই আটকে ফেলে আব্দুল্লাহর খুনিদের খুঁজে বের করার জন্য। আর এরপর লোকটা যখন তার উপর ঝাপিয়ে পড়ে তখন তাকে হারাতে হয় তিনটা আঙুল। রামদা মুঝে তুঝে বিছানায় শুত এই স্বপ্নের সেই গরু গুলো হাম্বা করে। কারা জানাতে থাকে আব্দুল্লাহ মরেনি। আব্দুল্লাহ চিরকাল আমাদের মধ্যে থাকবে। সকালে ঘুম থেকে উঠে নিশিন্দা দেখে তার উঠোনে চামার পাড়ার নর-নারী ছেলে-বুড়ো বউ-বাচ্চাদের বিরাট জমায়েত। তারা এসেছে নিশিন্দা কে রক্ষা করতে। সমন্বিতভাবে নিজেদেরকে রক্ষা করতে। প্লটের পরিমিতবোধ এবং বিবরণের সৌকর্য নিশিন্দা নারী উপন্যাসটি কে অসাধারণ মানে উত্তীর্ণ করেছে।আল মাহমুদের আরেকটি উল্লেখযোগ্য উপন্যাস হলো ‘আগুনের মেয়ে’। এই উপন্যাসটি নিয়ে যেভাবে আলোচনাও হওয়া উচিত ছিল সেভাবে হয়নি। ব্যতিক্রমধর্মী এই উপন্যাসের অসাধারণ আইডিয়া কবি আল মাহমুদের মাথায় কি করে এসেছিল? সেই প্রশ্নে জানিয়েছিলেন, কেন আসবে না, আমি জিনে বিশ্বাস করি। আমাদের সমাজের অভ্যন্তরে আমরা যেহেতু মুসলমান, আমরা যেহেতু কোরআন পাঠ করি, আমরা জিনের উপর বিশ্বাস করি। আর একটি কথা পৃথিবীর শ্রেষ্ঠ উপন্যাস তার নাম হলো এরাবিয়ান নাইটস। এরপর এর তুলনায় আর কোন উপন্যাস লেখা হয়নি। এই উপন্যাসের একটা বড় উপাদান হলো জিন চরিত্র। তাহলে আমরা জিনকে কেন ব্যবহার করব না। এই জন্য একটা পরীক্ষামূলক উপন্যাস লিখলাম। আমি এই উপন্যাস দিয়ে আমাদের সবচেয়ে যারা আধুনিক লেখক তাদের একদম নাড়িয়ে দিয়েছি। আমরা কল্প স্টোরি করি। আমরা জিনে বিশ্বাস করি। জিন আছে, কিন্তু তা আমাদের গল্পে নেই। আগের দিনের লেখকরা অ্যারাবিয়ান নাইটস যারা লিখেছে, তৈরি করেছে, তারা এটাকে জাদু হিসেবে নিয়েছেন। হিন্দু শাস্ত্রে ও কিন্তু জিনের কথা আছে। গন্ধম চরিত্র আছে। এ সবই কাল্পনিক চরিত্র। কিন্তু ‘আগুনের মেয়ে’ আমি লিখেছি আমার গভীর বিশ্বাস থেকে। জিনের মেয়ে জাহারুন নার চরিত্র কে রক্তমাংসের এক সুন্দরী মানবী বলেই মনে হয়। পাঠকের এই অনুভব প্রসঙ্গে আল মাহমুদের বক্তব্য, তাইতো মনে হওয়া স্বাভাবিক। যাহারা শব্দের অর্থ ফুল। ফ্লাওয়ার মেড বাই ফায়ার, ‘আগুনের ফুল’। তোমরা কোরআন পাঠ করে দেখো জিনকে কেমন মনে হয়। ‘আগুনের মেয়ে’ লেখাটিকে আমি আমার সার্থক লেখা বলে মনে করি।’আগুনের মেয়ে’ উপন্যাসের কথক সাংবাদিক রেজাউল করিম। রেজাউল করিমের বাগদত্তা কাওসরী বেগ এবং বাড়িওয়ালা আহমেদ আমের কে ছাড়িয়ে যে চরিত্র বেশি গুরুত্ব বিবেচিত সে একজন জিন। নাম জাহারুন নার। কল্পিত এই নারী চরিত্রটি উপন্যাসের প্রধান উপাত্ত। নতুন বাসায় একাকি রাত যাপন করতে গিয়েই জিন এর সাথে রেজাউল করিমের সাক্ষাৎ। লেখক তার কল্পনা থেকে জিনের শারীরিক বর্ণনা ও কার্যাদির বিবরণ দিয়েছেন। উল্লেখযোগ্য বিষয় হলো আল মাহমুদ ই প্রথম জিন চরিত্র নিয়ে উপন্যাস রচনা করেছেন। আল মাহমুদ এর মুক্তিযুদ্ধ ভিত্তিক উপন্যাস হলো ‘উপমহাদেশ’। ‘উপমহাদেশ’ উপন্যাস এ প্রত্যক্ষ ও বিস্তৃত পেক্ষাপটে মুক্তিযুদ্ধকে ধরার চেষ্টা করা হয়েছে। ‘উপমহাদেশ’ উপন্যাসে মুক্তিযুদ্ধ ছাড়িয়ে, কখনো কখনো নায়ক কবি মীর হাদী ও নায়িকা নন্দিনীর সম্পর্কে টানাপোড়েন প্রাধান্য পেয়েছে বলে মনে হয়। এ বিষয়ে লেখকের বক্তব্য হতে পারে। আর তাহলে অসুবিধে তো নেই। আমি তো উপন্যাস লিখতে চেয়েছি, মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস লিখতে চাইনি। কিন্তু বিষয়টা মুক্তিযুদ্ধের ছিল। আর এটা আমি জানতাম। অন্য লেখকরা এটা জানে না। কারণ তারা তো মুক্তিযুদ্ধে অংশগ্রহণ করেনি। এটা বহুবার আমি বলেছি। সে অবস্থায় একটা ঘটনা দুর্ভাগ্যজনকভাবে একটা হিন্দু পরিবারের মেয়ে, তার কাহিনী আমি বলেছি। কিছু বানিয়ে বলেছি। কিন্তু বাস্তব অবস্থা থেকে বলেছি। আল মাহমুদের আরেকটি উপন্যাস হলো ‘কবি ও কোলাহল’। সমালোচকদের অভিমত হলো এই উপন্যাসে আল মাহমুদ রবীন্দ্রপন্থীদের আক্রমন করেছেন। এ বিষয়ে আল মাহমুদের বক্তব্য এটা ঠিক না, এটা একটা মিথ্যা অভিযোগ। আমি নিজেই রবীন্দ্রনাথ পড়ি। বাংলা সাহিত্যে রবীন্দ্রনাথ কে অস্বীকার করার কোন উপায় কি কারো আছে। এই উপন্যাসে ঠিক রবীন্দ্র বিরোধী কিছু না, সেখানে পাঞ্জাবি নিয়ে একটা কথা আছে। এটা প্রকৃতপক্ষে রবীন্দ্র বিরোধিতা নয়। এইটুকু বিরোধিতা পশ্চিমবঙ্গের তরুণ কবিদের মধ্যে তোমরা দেখবে। রবীন্দ্রনাথকে আমি সবচেয়ে বেশি পড়েছি। আমার প্রিয় কবিদের মধ্যে রবীন্দ্রনাথ একজন। বিশেষ করে ছন্দের ব্যাপারে আমি সব সময় রবীন্দ্রনাথই পড়ি। ‘কবি ও কোলাহল’ উপন্যাসের লেখক এক জায়গায় লিখেছেন, এ দেশের জন্য স্বপ্ন চাই। এত হতাশার মধ্যে মানুষ বাস্তব নিয়ে বাঁচতে পারে না। পারে কেবল কল্পনা, আশা আর অলিক স্বপ্নের মধ্যে বাঁচতে। সাহিত্য সমালোচকদের অভিযোগ, লেখক মানুষকে বাস্তবের মুখোমুখি হতে নিষেধ করেছেন। এটা এক ধরনের পলায়নী মনোভাব। এ বিষয়ে লেখক আল মাহমুদের বক্তব্য, আসলে এটা বাস্তবের বিরুদ্ধে নিষেধ নয়। আমি কবি মানুষ, বাস্তবের রুঢ়তা সহ্য করতে পারি না। সেই জন্য এটা কে পাশ কাটিয়ে যেতে চাই। এটাকে ঠিক পলায়নী মনোভাব বলা যায় না। এটা হল এমন মানসিকতা যে, আমরা জানি মৃত্যু আছে। এরপরও আমরা মৃত্যুকে ভুলে থাকি। মানুষ যদি 24 ঘন্টা মৃত্যুর বিষয়টা ভাবতে থাকে, তাহলে সে বাঁচতে পারবে না। এটাতো পলায়নী মনোবৃত্তি নয়। এটা হল বাস্তব অবস্থা সম্পর্কে সম্যক জ্ঞান রেখে কোন কিছুকে এড়িয়ে যাওয়ার চেষ্টা। আল মাহমুদের ‘পুত্র’ নামে উপন্যাসটি পারিবারিক কোন ঘটনা থেকে লিখিত হয়েছে কিনা এই প্রশ্নে লেখক জানিয়েছিলেন, ঘটনাটা আমার পরিবারের না। তবে আমি একটা পারিবারিক উপন্যাস লিখতে চেয়েছি। উপন্যাসে আমি পারিবারিক আবহাওয়াটা ব্যবহার করতে চেষ্টা করেছি। এই উপন্যাসে দেখানো হয়েছে মেয়েরা মেয়েদের সহ্য করতে পারে না। এই আপ্তবাক্যটি প্রয়োগ কি আপনার উপন্যাসে দেখাতে চেয়েছেন নাকি, এটা ইডিপাস কমপ্লেক্স। এই প্রশ্নে লেখক জানিয়েছিলেন, মনে হয় অনেকটা ঠিক হতে পারে। আবার নাও হতে পারে। এই উপন্যাস পড়ে এক মহিলা পাঠিকা আমাকে টেলিফোন করে মহা গালিগালাজ করেছিলো। তা থেকে আমি বুঝেছি খুব বাস্তব অবস্থার মধ্যে আমি উপন্যাসটি লিখেছি। এই উপন্যাসে লেখক, ছেলে বিয়ে করলে পর হয়ে যায় এই সামাজিক মনোভাব প্রিয় তুলে আনতে চেয়েছেন বলে সাহিত্য সমালোচকরা সমালোচনা করেছেন। এ বিষয়ে লেখক এর দাবি, এটা ঠিক না ।আসলে ছেলে বিয়ে করলে পর হয় না। কিন্তু আমি মনে করি ছেলে বিয়ে করলে আলাদা মানুষ হয়। আল মাহমুদের লেখা ‘পুরুষ সুন্দর’ উপন্যাস বিষয়ে অশ্লীলতার অভিযোগ উঠেছিল সাহিত্য-সমালোচক মহলে। এ বিষয়ে লেখক আল মাহমুদের বক্তব্য, না আমি তো কোন অশ্লীল কিছু লিখিনি। এখন কেউ যদি আমাকে অযথা দোষারোপ করে তাহলে অন্য কথা। আমি ‘পুরুষ সুন্দর’ উপন্যাসটি বাস্তব অবস্থা থেকেই লিখেছি। এই গল্প অবাস্তব এর উপর বানাইনি। গায়ের জোরে আমি গল্প বানাই না। সাহিত্য সমালোচকদের অভিমত, ‘পুরুষ সুন্দর’ উপন্যাসটি আল মাহমুদ না লিখলেও পারতেন। এই অভিমত প্রসঙ্গে লেখক এর বক্তব্য, না লিখলেও হয়ত পারতাম। তাহলে আমাকে কেউ এত দোষারোপ করতে পারত না। কিন্তু কিছু কিছু রিস্ক তো নিতেই হয়। যেমন ধরো আমাকে বলা হয় আমি ইসলামপন্থী লেখক। অনেকে আবার ইসলামপন্থী লেখকদের একটা সীমা নির্ধারণ করে দিতে চায়। ইসলামপন্থী লেখক হলে সে এই এই লেখা লিখতে পারবে না। এই ধরনের লিখবে। এটা মোটেই ঠিক না। মুসলমানরাই তো লিখেছে এরাবিয়ান নাইটস। কিন্তু এতে শ্লীলতা কোথায় আছে? লেখক আল মাহমুদ একসময় মন্তব্য করেছিলেন অজু করে সাহিত্য হয় না। ‘পুরুষ সুন্দর’ উপন্যাস কি তারই প্রমাণ? এই প্রশ্নের উত্তরে লেখক এর মন্তব্য, কথাটা হয়তো বলেছিলাম কোন এক সময়। কিন্তু কথাটা আমি এখন আর রিপিট করতে চাই না। অজু করে ও সাহিত্য হয়। ‘যে পারো ভুলিয়ে দাও’ উপন্যাসটির প্রথম খন্ড লিখে লেখক থামিয়ে দিয়েছিলেন। এই উপন্যাসটি পড়লে মনে হয় এটি লেখক এর নানার বাড়ির ঘটনা। এখানে পারিবারিক বিষয়ে কিছু অপ্রিয় সত্য কথা লেখক লিখেছেন। এ বিষয়ে লেখক এর বক্তব্য, একটা পারিবারিক উপন্যাস লিখতে চেয়েছিলাম। আর ঘটনা তো আনতেই হবে। ঘটনা যা ,তা আনতে হবে। নইলে উপন্যাস হবে না। আমার লজ্জা হবে, সেই জন্য আমি যদি সত্য না বলি, তাহলে যে উদ্দেশ্যে আমি এটা লিখছি তা পূর্ণ হবে না। মামাদের ঘটনা এসেছে যদিও তাদের অনেকেই এখন নেই। আরো সুবিধাই বা হবে কেন তারা তো অতটা অশিক্ষিত লোক না। তারা যে পরিবেশে মানুষ হয়েছেন তাতে উপন্যাস সাহিত্য শিল্প বুঝবেন না তা নয়। আল মাহমুদ একটি থ্রিলার উপন্যাস লিখেছেন সেটির নাম ‘মরু মূষিকের উপত্যকা’। আপনি একজন কবি আপনার মত একজন কবির থ্রিলার লেখাটা কি সচেতনভাবেই লেখা। লেখক এর বক্তব্য, থ্রিলার হিসেবেই লিখেছি। আমাকে লিখতে অনুরোধ করা হয়েছিল, আমি লিখে দেখলাম যে এটাও পারি। আল মাহমুদের বিরুদ্ধে অভিযোগ, তার লেখা ‘চতুরঙ্গ’ উপন্যাসের নারী মডেলদের আক্রমণ করা হয়েছে এবং উপন্যাসে এদেরকে নেতিবাচক হিসেবে তুলে ধরা হয়েছে। এ বিষয়ে লেখক এর বক্তব্য অবাস্তব কিছু লিখিনি। আমি জানি বলেই লিখেছি। এই উপন্যাসে আমি নারীর প্রকৃত স্থান এবং মর্যাদার কথা বলেছি। ফটোগ্রাফি সম্পর্কে এই উপন্যাসের লেখক চমৎকার বর্ণনা দিয়েছেন। এ বিষয়ে লেখক জানিয়েছেন, তিনি একটি দৈনিক পত্রিকার এডিটর ছিলেন। তাই ফটোগ্রাফি সম্পর্কে যথেষ্ট ভালো জ্ঞান ছিল। তাই ফটোগ্রাফি সম্পর্কে সার্থক ভাবে লিখতে পেরেছেন। আল মাহমুদ ‘হরিৎ খোলস’ নাম একটি উপন্যাস লিখেছেন। তাকে প্রশ্ন করা হয়েছিল আপনার বিরুদ্ধে অশ্লীলতার যে অভিযোগ আনা হয়, তার জবাব দিতেই কি আপনি এই ধরনের উপন্যাস লিখেছেন। লেখক এর স্বীকারোক্তি আমার লেখা খানিকটা অশ্লীল বটেই। কিন্তু বাংলাদেশের শ্লীলতা কোথায়? আমি যা দেখেছি সব অশ্লীল দেখেছি তাই লিখেছি। আমি বাংলাদেশের শ্লীলতা দেখিনি, তাই আমি বানিয়ে কিছু লিখিনি। আমি যদি মানুষের সেক্স কে উত্তেজিত করতে কিছু লিখে থাকি, সেটা হবে অশ্লীল। কিন্তু আমি যা লিখেছি সেটা সেক্স কে উস্কে দেয় না, সেক্স কে লজ্জিত করে। বাংলা ভাষার প্রধান আধুনিক কবি আল মাহমুদের উপন্যাস লেখাকে অনেকে সমালোচনা করে বলেন, কবিতা লিখেছেন নিজের আনন্দে, কিন্তু উপন্যাস লিখেছেন স্রেফ অর্থের জন্য। এ বিষয়ে আল মাহমুদের বক্তব্য, এটা খুবই মিথ্যা অভিযোগ যদি আমি কবিতা না লিখতাম তাহলে হয়তো গদ্যশিল্পী তৈরি করতাম। আমার কিন্তু সমস্ত ঝোঁক ছিল কথা সাহিত্যের দিকে। বাই চান্স কবিতা লেখা শুরু করি, সেই চলা শুরু। ‘কাবিলের বোন’, ‘আগুনের মেয়ে’, ‘নিশিন্দা নারী’,র মতো উপন্যাস অর্থের জন্য কেউ লিখতে পারে না। লক্ষ টাকা দিলেও কেউ এ জিনিস লিখতে পারবে না। উপরের আলোচনা থেকে স্পষ্ট, ঔপন্যাসিক হিসেবে আল মাহমুদ সমকালীন বাংলা কথাসাহিত্যে উল্লেখযোগ্য স্থান করে নিতে পেরেছেন ।