ইতিহাস-ঐতিহ্য

দেশভাগের পরিপ্রেক্ষিতে গান্ধী-জিন্না বার্তালাপ, ২য় পর্ব

699views

মইনুল হাসান

তারপর

এরপর একবারই দু’জনের সাক্ষাত হয়েছিল ঠিক স্বাধীনতার প্রাক্কালে। দেশ ভাগ হবে কিনা? বই বিষয়ে আলোচনায়। রাজাজি’র একটি ফর্মূলা ছিল – দেশ অখণ্ড রেখে জিন্নাকে সন্তুষ্ট করা। যে সমস্ত প্রদেশ মুসলমানদের সংখ্যাঘরিষ্ঠতা আছে সে সমস্ত প্রদেশে মুসলমানদের স্বাধীনভাবে শাসন করার অধিকার দিতে হবে। কেন্দ্রের কোনওরকম হস্তক্ষেপ করা চলবে না। কারণ মুসলমানরা পৃথক একজাতি। অর্থাৎ দ্বিজাতিতত্ত্বকে স্বীকৃতি দিতে হবে।

গান্ধী-জিন্না আলোচনা ১৯৪৪ সালের ৯ সেপ্টেম্বর থেক ২৭শে সেপ্টেম্বর চলেছিল। দীর্ঘ আলোচনা ব্যর্থ হয়েছিল। প্রধান কারণ গান্ধীজী অন্যান্য দাবি মেনে নিলেও মুসলমানরা এক পৃথক জাতি এবং তাঁদের আত্মনিয়ন্ত্রনের অধিকার আছে এটা মানতে রাজি ছিলেন না। শুধুমাত্র এই ব্যাপারে দু’জনের মধ্যে চিঠি লেখালেখি হয়েছে। যা স্বাধীনতা আন্দোলনের গুরুত্বপূর্ণ দলিল হিসাবে চিহ্নিত হয়েছে।

দেশভাগ এড়াতে গান্ধী জেল থেকে ছাড়া পাওয়ার পর আলোচনার জন্য জিন্নাকে আহ্বান জানান। গান্ধী মনে করতেন ভারত এক জাতির দেশ। দ্বি-জাতি তত্ত্বে বিশ্বাস করতেন জিন্না। ১৯৪৪ সালেই নয়। ১৯০৮ সালে গান্ধী তাঁর বক্তব্য (এ ব্যাপারে) হিন্দু স্বরাজ পত্রিকার সঙ্গে এক সাক্ষাতকারে বলেছিলেন –

Indian cannot cease to be one nation because people belonging to different religions live in it. The introduction of foreigners does not necessarily destroy he nation; they merge in it. তারপর তিনি বলেছেন In reality, there are as may religions as there are individuals; but those who are conscious of the spirit of nationality do not interfere with one another’s religion. If they do, they are not fit to be considered a nation. If the Hindus believed that India should be peopled only by Hindus, they are living in dreamland – in no part of the world are one nationality and one religion synonymous terms, not has it ever been so in India.

 

পত্রিকার পক্ষ থেকে তাকে জিজ্ঞাসা করা হয়েছিল হিন্দু-মুসলমানের মধ্যে ‘জন্মগত শত্রুতা’ আছে সে ব্যাপারে তাঁর মত কী? প্রশ্নটি উপেক্ষা না করে তিনি উত্তর দিয়েছিলেন –

এরপর হিন্দু-মুসলমানের মধ্যে জন্মগত শত্রুতা (Indian enimity) সম্পর্কিত প্রশ্নের উত্তরে গান্ধী বলেছিলেন – The proverbs you have (প্রশ্নকর্তার উদ্দেশ্যে) Quoted were coined when both were fighting; To quote them now is obviously harmful. Should we not remember that many Hindus and mahamedans own the same ancestors and the same blood runs through their veins? Do people become enemies because they change their religion? Religions are different roads converging to the same point. Wherein is the cause of quarrelling?

 

১১০ দশ বছর আগে গান্ধীর উত্তরগুলো আজও প্রাসঙ্গিক। গান্ধী ও জিন্নার মধ্যে ১৪টি সাক্ষাতকার অনুষ্ঠিত হয়েছিল। বোম্বাই শহরে। প্রথম ৯ সেপ্টেম্বর ১৯৪৪ এবং শেষবার ২৭ সেপ্টেম্বর ১৯৪৪। প্রথমে ঠিক হয়েছিল সাক্ষাতকারটি হবে ১৭ আগষ্ট। কিন্তু জিন্না অসুস্থ হয়ে পড়ার জন্য পিছিয়ে দেওয়া হয়। খুবই আন্তরিক ও সৌহার্দপূর্ণ পরিবেশে আলোচনা হয়। তারমধ্যে তাদের মধ্যে পত্রালাপ হয়।  প্রথম চিঠিটি প্রথম দিনের আলোচনার পরদিনই জিন্না গান্ধীকে লেখেন। এই চিঠিতেই জিন্না তাঁর মূল যুক্তিগুলো পরপর সাজিয়ে দেন। জিন্নার কোন কাজে কোন ভনিতা ছিল না। বরাবর গান্ধীর সঙ্গে তিনি একজন বয়স্ক গুরুত্বপূর্ণ নেতার সম্মান দিয়ে কথা বলেছেন। আতিশয্য তিনি পছন্দ করেননি। সভাসমিতি বা কংগ্রেস অধিবেশনে তিনি গান্ধীজীকে ‘মিঃ গান্ধী’ বলে সম্মোধন করতেন। পুরোপুরি ইউরোপীয়ান্দে মতো। তাতে অনেক সভাতে অনেক প্রতিবাদ বা বিদ্রুপ করেছেন জিন্নাকে। জিন্নাকে তাঁর মত থেকে কেউ টলাতে পারেনি। উলটে তিনি আলি ভ্রাতৃদ্বয়কে বলেছেন – ‘আমি তো যথাযথ সম্মান দিচ্ছি। কোন অসম্মান তো করিনি।’ অন্যদের মতো গান্ধীজী বা মহাত্মা বা মহাত্মা গান্ধী এসব তিনি বলেননি। এসব জিন্না আদব কায়দাতেই ছিল না। অনেকেই তাঁকে বলতেন ‘মোর ইউরোপীয়ান, দ্যান এ ইউরোপীয়ান।’ তিনি যে চিঠি ১০ সেপ্টেম্বর গান্ধীজীকে লিখলেন তাতে সম্বোধন করলেন, ‘প্রিয় মি. গান্ধী’ বলে। (চিঠির বঙ্গানুবাদ পরে দিচ্ছি)

১৯৪৪ সালে গান্ধী-জিন্নার আলোচনা হয়েছে। পাঠকের মনে আছে নিশ্চয় তার ৪ বছর আগে মুসলিম লীগ দেশভাগের প্রস্তাব মেনে নিয়েছে। তার পরও ১৯৪৪ সালে গান্ধীজীকে জিন্না বলেছেন –

I naturally point out you that there must be someone on the other side with authority holding a representative status with whom I can negotiate and if possible, come to settlement of the Hindu-Muslim question.

চলবে…

Leave a Response