সংবাদ

শিক্ষা ক্ষেত্রে ১৩ দফা দাবী নিয়ে বিকাশভবন অভিাযানে এসআইও

438views

আবদুল হামিদ


দুপুর তখন ২ টা। ১৯ জুলাই, বৃহস্পতিবার। সল্টলেক টেকনো ইন্ডিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের কাছে থেকে কয়েক হাজার ছাত্র যুবক পদযাত্রায় অংশগ্রহণ করেছে এসআইও’র ডাকে। সকলেই বিকাশভবনের উদ্দেশ্যে পা বাড়ালে পুলিশ তা আটকানোর চেস্টা করে। চলে ধস্তাধস্তি। পরে বাধ্য হয়ে পুলিশ বিকাশভবন সংলগ্ন এলাকায় জমায়েত ও সভার ব্যবস্থা করে দেন। এরপরে এসআইও পশ্চিমবঙ্গের রাজ্য সভাপতি ওসমান গনী সহ সংগঠনের এক প্রতিনিধি দল বিকাশভবনে স্মারকলিপি জমা দেন। এই স্মারকলিপিতে যে ১৩ দফা দাবী তুলে ধরা হয়েছে, সেগুলি হল-
১.  সম্প্রতি রাজ্য সরকার কর্তৃক ঘোষিত বিশ্ববিদ্যালযগুলি দ্রুত বাস্তবায়ন করতে হবে।
২.  হুগলি মাদ্রাসাকে আলিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের আওতায় কলেজ হিসাবে ঘোষণা করতে হবে।
৩. PSC-র নিযোগ প্রক্রিয়ায় চলমান সমস্যার দ্রুত সমাধান করতে হবে।
৪. শিক্ষা ও চাকরির সর্বক্ষেত্রে সংরক্ষণের নীতিকে বাস্তবায়ন করতে হবে।
৫. SSC, প্রাইমারীসহ অন্যান্য চাকরির পরিক্ষাগুলিতে দ্রুত নিযোগ প্রক্রিয়া সম্পন্ন করতে হবে।
৬. চাকরির ক্ষেত্রে শূন্যপদ পূরণের জন্য নিয়মিত পরীক্ষার ব্যবস্থা করতে হবে।
৭. বেকারত্ব দূরীকরণে যোগ্যতানুযায়ী উপযুক্ত কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা করতে হবে।
৮. MSC-তে চলমান সংকট নিরসনের জন্য রাজ্য সরকারকে সদর্থক পদক্ষেপ গ্রহণ এবং দ্রুত নিয়োগ করতে হবে।
৯. শিক্ষার অধিকার আইনকে সর্বক্ষেত্রে বাস্তবায়ন করতে হবে।
১০. NFC-র গাইডলাইন মেনে পাঠক্রম রচনা করতে হবে।
১১. ছাত্র“শিক্ষক অনুপাত, শিক্ষাঙ্গনের পরিকাঠামোসহ সর্বক্ষেত্রে শিক্ষার গুনগতমান সুনিশ্চিত করতে হবে।
১২. অবিলম্বে আলিযা বিশ্ববিদ্যালযে মাইনোরিটি স্ট্যাটাস আইনগত ভাবে সুনিশ্চিত করতে হবে।
১৩. কারিগরী শিক্ষা ব্যবস্থাকে ঢেলে সাজাতে হবে।

এদিন স্মারকলিপি জমা দেওয়ার মাঝে এক প্রকাশ্য সভায় এসআইও’র রাজ্য সভাপতি ওসমান গনি বলেন, শিক্ষা ক্ষেত্রে দেশজুড়ে যে সংকট দেখা দিয়েছে তা খুবই উদ্বেগের বিষয়। একদিকে যেমন শিক্ষার মৌলিক অধিকার থেকে বঞ্চিত হচ্ছে দেশের অধিকতর জনগন, অন্যদিকে পিছিয়ে পড়া জনগোষ্ঠীকে সংরক্ষণের আওতায় আনলেও প্রকৃত অর্থে সব জায়গায় বিশেষত উচ্চশিক্ষা ও চাকরির নিয়োগের ক্ষেত্রে তা সম্পূর্ন রুপে মানা হচ্ছেনা।

এসআইও’র প্রাক্তন সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক আবদুর রাফিক বলেন, বিচ্ছিন্নতার বাতাবরণে শিক্ষা কখনোই শিক্ষার্থীদের মূল্যবোধের বিকাশ ঘটাতে পারে না, বহুত্ববাধী সমাজে সহিষ্ণুতা, সহযোগিতা ও মানবিকতাকে জাগ্রত করে তোলার শিক্ষা হলো প্রকৃত শিক্ষা । এদিন তিনি জানান, বেকারত্ব নিরসনের জন্য কেন্দ্র ও রাজ্য কেউই এখনও সঠিক গাইড লাইন পেশ করতে পারেনি বর্তমান যুবসমাজের কাছে। বিশেষ করে শিক্ষা ক্ষেত্রে দিনের পর দিন যে পরিমান শূন্যপদ তৈরী হচ্ছে শুধু মাত্র পশ্চিমবঙ্গে প্রায় ৬০ হাজার শিক্ষকের শূন্যপদ রয়েছে। আমরা নিশ্চিত ভাবে বলতে পারি যার দরুণ শিক্ষা প্রতিষ্ঠান গুলোতে ভারসাম্য নষ্ট হচ্ছে।

সংগঠনের রাজ্য সাধারণ সম্পাদক ইমাম হোসেন এদিন বলেন, RTE-এর গাইড লাইন না মানার কারনে পুরো শিক্ষা ব্যবস্থা আজ ধ্বংসের মুখে।গুনগত মান সম্পন্ন মূল্যবোধের শিক্ষার অভাব যুব শক্তিকে ভুল পথে পরিচালিত করছে। তিনি দাবী করেন, ২০১৩ সালে পশ্চিমবঙ্গ সরকার উচ্চশিক্ষায় সংরক্ষণ কার্যকর করতে ওয়েস্ট বেঙ্গল হায়ার এডুকেশন ইনস্টিটিউশন (রিজারভিশন ইন এডমিশন) অ্যাক্ট তৈরি করে । রঙ্গনাথ মিশ্র কমিশন রিপোর্টে বলা হয়েছে ১০% মুসলিমদের সংরক্ষণ দিতে হবে । চাকরির নিয়োগ ও উচ্চ শিক্ষায় সংরক্ষণের নীতিকে মানা হচ্ছে না (উদাহরণ স্বরূপ কল্যাণী বিশ্ববিদ্যালয় ও পশ্চিমবঙ্গ স্বাস্থ বিশ্ববিদ্যালয়) আমরা এর তীব্র প্রতিবাদ ও নিন্দা জানাই। এছাড়া ২০১৭ সালে সাচার কমিটির ৭২ টি রেকম্যান্ডেশন এর বাস্তবায়ন চাই । 

তিনি আরো বলেন, এসএসসি এবং এমএসসি প্রাইমারী, গ্রুপ ডি থেকে পিএসসি বেশির ভাগ ক্ষেত্রেই নিয়োগে অনিয়ম অথবা দুর্নীতির কারণে বারবার প্রশ্নের সম্মুখীন হচ্ছে রাজ্য সরকার। পিএসসি ২০১৭ বিসিএস পরীক্ষার ফল প্রকাশকে কেন্দ্র করে পরিস্কার দুর্নীতির অভিযোগ উঠেছে পশ্চিমবঙ্গ পাবলিক সার্ভিস কমিশনের বিরুদ্ধে। একদিকে যেমন যোগ্য ছেলেরা উচ্চ শিক্ষার সঠিক পরিবেশে পাচ্ছে না এবং ঠিক তার উল্টো দিকে বহুকষ্টে উচ্চ শিক্ষা অর্জন করলেও তাদের মেধার প্রতি সুবিচার করা হচ্ছেনা। বেকারত্বের প্রশ্নে কেন্দ্র এবং রাজ্য সরকার কেউই তাদের প্রতিশ্রুত পালন করতে পারেনি। আসলেই শিক্ষিত বেকারদের ব্যপারে বিশেষ কোন ভাবনা ও পরিকল্পনা না থাকার করনেই এই সমস্যা দিনের পর দিন আরো বাড়ছে। তাই, আমরা প্রথম থেকেই শিক্ষার গুনগতমান এবং বেকারত্বের প্রশ্নে সরব হয়েছি।

এই সভায় অন্যান্যদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন সংগঠনের রাজ্য তত্বাবধাযক মহম্মদ নুরুদ্দিন, এসআইও’র রাজ্য সংগঠন সম্পাদক সেক খালিদ আলি, প্রাক্তণ সংগঠন সম্পাদক সাবির আলি, জনসংযোগ সম্পাদক সুজাউদ্দিন আহমেদ, ক্যাম্পাস সেক্রেটারী তৌসিফ আহমেদ, সাংস্কৃতিক সম্পাদক আব্দুল্লাহ গাজী প্রমুখ ।

Leave a Response