পুস্তক আলোচনাঃ দুর্বলতা ও হিংসা বিদ্বেষের পরিবেশে সীরাতের অনুপম শিক্ষা
বর্তমান ভারতবর্ষে হিংসা-বিদ্বেষের বিষাক্ত জ্বাল সমাজকে ভয়ানকভাবে ঘিরে রেখেছে। এহেন পরিস্থিতিতে দেশের নাগরিক হিসেবে আমরা ঠিক কীরকম জীবনযাপন করবো তা নিয়ে রয়েছে বহু জল্পনা। ঠিক এরকমই এক পরিস্থিতির সম্মুখীন হয়েছিলেন শ্রেষ্ঠ মানব নবী করীম (সা.)। নবুয়তের শুরুতে মক্কার মিশ্র সমাজে থাকাকালীন দুর্বল সময়ে হিংসা বিদ্বেষের শিকার হয়েছিলেন তিনি। তাঁর জীবনের ওই মুহূর্তগুলিতে তিনি আমাদের জন্য কী শিক্ষা রেখে গেছেন তাই নিয়ে ড. মহিউদ্দিন গাজী রচনা করেছেন, “দুর্বলতা ও হিংসা বিদ্বেষের পরিবেশে সীরাতের অনুপম শিক্ষা” বইটি। উর্দু ভাষায় রচিত বইটি বাংলায় ভাষান্তর করেছেন মুর্শিদাবাদের পুত্র মুহাম্মদ মুরসালিম।
বইটি পড়লে অজান্তেই আপনি সিরাতের শিক্ষাগুলো অনুধাবন করতে পারবেন ও নবীজীবন সম্পর্কে কিছু পরিষ্কার ধারণা পাবেন। বইটি খুবই সহজ ভাষায় রচিত ও অনুদিত হয়েছে। এই বইটি মোট ১৬ পৃষ্ঠায় সম্বলিত। আজকের গতিমান যুগে কম সময়ে সহজে বোধগম্যের লক্ষ্যে পয়েন্ট আকারে গথিত হয়েছে মূল বিষয়গুলি। মোট ১৫টি পয়েন্ট, তবে এক একটি পয়েন্ট আমাদের শিরায় শিরায় গেঁথে দিতে পারবে মানবতার মুক্তির প্রতিক মুহাম্মদ (সা.) এর শিক্ষাগুলোকে। আর আপনি যদি সিরাত না পড়েন আপনার তাহলে মানবতার মুক্তির প্রতিক মুহাম্মদ (সাঃ) কে আপনি জানতে পারবেন না।
ড. মহিউদ্দিন গাজী সাহেব একজায়গায় লিখেছেন: “ইসলাম কাউকে চিরশত্রু হিসেবে বিবেচনা করে না। সীরাতে রাসুলের গুরুত্বপূর্ণ শিক্ষা হচ্ছে এই যে, মুসলমান যেন কাউকে চিরশত্রু মনে না করে। কুরআন মাজিদের তালিম হচ্ছে এই যে, ঘোর থেকে ঘোরতর শত্রুর মাঝেও বন্ধু হওয়ার কিছু না কিছু সম্ভাবনা আছে। এই সম্ভাবনাকে অগ্রাহ্য, উপেক্ষা করা কোনো বিজ্ঞ মানুষের কাজ হতে পারে না। এই সম্ভাবনাকে বাস্তবে রূপ দেওয়া মুসলমানদেরই কাজ। রাসুলের (সঃ) সীরাতে সর্বদাই এই ইতিবাচক দৃষ্টিভঙ্গির শিক্ষা পাওয়া যায়।”
তিনি ঘোরতর শত্রুকেও বন্ধুরুপে গ্ৰহন করতেন। উদাহরণ স্বরুপ:
এক বর্ণনায় এসেছে –
আনাস ইবনে মালিক (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, “একদা জনৈক বেদুঈন এসে মাসজিদের এক পাশে পেশাব করে দিল। তা দেখে লোকজন তাকে ধমক দিতে লাগল। নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়সাল্লাম তাদের নিষেধ করলেন। সে তার পেশাব করা শেষ করলে নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর আদেশের উপর এক বালতি পানি ঢেলে দেওয়া হল।” – বুখারী।
নিজ প্রভূর আরাধনার স্থানে বেদুঈন পেশাব করেও আল্লাহর রসূল (সাঃ) তাকে ধমক দিলেন না তাকে কোনো কথা শোনালেন না। তিনি হলেন বিশ্ব মানবতার শিক্ষক তার জীবনী থেকে আমাদের শিক্ষাগুলো গ্ৰহন করতে হবে। তাহলেই এই ঘৃণা , হিংসা, বিদ্বেষ ও হানাহানির পরিবেশে আমরা নিজেরা নিজেদের মানিয়ে নিতে পারব।
সঠিক দিকনির্দেশনার জন্য মহান আল্লাহতায়ালা যুগে যুগে অসংখ্য নবী-রাসুল পাঠিয়েছেন। প্রত্যেক নবী-রাসুলই তাদের উম্মতের সংশোধনের জন্য উত্তম চরিত্র প্রদর্শন করেছেন। তেমনিভাবে সার্বিক জীবনে সর্বোৎকৃষ্ট চরিত্র ও মহৎ গুণাবলি প্রতিষ্ঠার জন্যই আল্লাহতায়ালা সর্বশেষ নবী হজরত মোহাম্মদ (সা.)-কে বিশ্ববাসীর আদর্শ করে পাঠিয়েছেন।
অন্যায়ের প্রতিবাদ মুমিন ব্যক্তি কখন কিভাবে করবে তার নির্দেশনা রাসুলুল্লাহ (সা.) দিয়েছেন। তিনি বলেছেন, ‘তোমাদের কেউ কোনো অন্যায় দেখলে সে যেন হাত দিয়ে তা প্রতিহত করে, যদি সে তাতে সক্ষম না হয়, তবে সে যেন মুখে প্রতিবাদ করে; আর যদি সে তাতেও সক্ষম না হয়, তবে মনে মনে তা পরিবর্তনের পরিকল্পনা করে। এটাই ঈমানের দুর্বলতম স্তর।’ (সহিহ মুসলিম, হাদিস : ৪৯)
আবু হুরাইরা (রা.) থেকে বর্ণিত হাদিসে রাসুল (সা.) বলেন, ‘আমি মহৎ গুণাবলির পূর্ণতা দিতে প্রেরিত হয়েছি।’ (আহমদ, হাদিস : ৮৯৩৯; আদাবুল মুফরাদ বুখারি, হাদিস : ২৭৩)
বইটি প্রকাশিত হয়েছে যুবপ্রত্যাশা প্রকাশনীর পক্ষ থেকে। দাম মাত্র ১৮ টাকা। আশা করছি স্বল্প আলোচনায় আপনাদের মধ্যে কিছুটা হলেও পুস্তকটির প্রতি কৌতূহল জাগাতে পেরেছি।