মহাব্বত সেখ
শিশু বলতে সাধারণত বোঝানো হয ১৫ বছরের নীচে অবস্থান করছে এমন বযসী ছেলে বা মেযে জীব বিজ্ঞানের ভাষায মানুষ্য সন্তানের জন্ম এবং বযসন্ধির মধ্যবর্তী পর্যায়ে রূপ হচ্ছে শিশু। শিশু শব্দের ইংরেজি শব্দটি হল Child যার অর্থ ভূমিষ্ঠকালীন ব্যক্তির প্রাথমিক রূপ।
প্রতিটি শিশু সন্তানের প্রতি মা-বাবার ভালোবাসা অকৃত্তিম। সংসার জীবনের সুখ-দুঃখ আনন্দ বেদনা সবকিছুই আবর্তিত হয শিশুকে কেন্দ্র করে। মানুষের কাছে সবচেয়ে মানব জীবনের কাঙ্খিত ধন হচ্ছে শিশু, স্নেহের টুকরো। বাবা-মাযে কাছে তাই এত সম্মান এত বছর ভালোবাসার নমুনা হিসাবে নানান উপাধি স্নেহের টুকরো, নযনের মনি, কলিজার টুকরো, সাত রাজার ধন, সোনা মনি, মানিক, বাৱু সোনা, ইত্যাদি ইত্যাদি। শিশুর চিকন গালে চুম্বন একে মা-বাবা অত্যন্ত তৃপ্তি পায়। শিশু হল পিতা-মাতার আত্মিক প্রশান্তির কারণ। সংসার জীবনের পূর্ণতা পাই একটি নবজাতকের আর্বিভাবের ফলে। শিশুর ফুলের মতো হাসি বাবা-মায়ের সমস্ত দুঃখ বেদনা ভুলিয়ে দেয়।
শিশুদের নিয়ে সহিত্য চর্চাও কম হয়নি। এই জন্যই ইসলামী শরীয়াহ বিয়ে থেকে বিরত থাকাকে নিষিদ্ধ করেছে। কুরআনে বলা হয়েছে-সন্তান ও সম্পদ দুনিযার জিন্দেগীর সৌন্দর্য। ( সূরা কাহাফ, ৪৬)
আর আমি তোমাদেরকে ধন সম্পদ ও পুত্র সন্ত্রাস দ্বারা সাহায্য করলাম (সূরা বনী ইসরাইল,৭) এবং আল্লাহর কাছে কিভাবে সন্তান চাইতে হয় তারও শিক্ষা আল্লাহ দিয়েছেন।
শিশুর প্রতি বাবা মায়ের ভালোবাসা আর স্নেহ মায়া থাকে। সন্তানের জন্য জীবনের সবকিছুকে বিলিয়ে দিয়ে বাবা-দেউলিয়া হয়ে গেলেও সন্তানের কোন ক্ষতি তাঁরা চান না। তবুও সঠিকভাবে সন্তানকে পালন না করতে পারার কারণে বার্ধক্য জীবনের বাবা-মায়ের প্রতি নেমে আসে এক পাহাড়সম বিষাদ। ‘ছেলে-বউযের বাড়িতে জীবনের শেষ নিঃশ্বাসটুকু ফেলার জায়গা পায় না। আশ্রয় গ্রহণ করতে হয় ‘বৃদ্ধাশ্রমে’। কিন্তু কেন এরূপ হচ্ছে, একবারও কি ভেবে দেখেছেন? যেই সন্তানের জন্য পিতামাতা সব কিছু বিলিয়ে দিতে প্রস্তুত সেই বাবা মায়ের প্রতি এই প্রতিদান কেন? একটু গভীর ভাবে ভাবুন উত্তর খুঁজে পাবেন। বাবা-মা তাদের সন্তানের প্রতি সীমাহীন ভালোবাসার দরুন ভুলে যান মানুষ গড়ার কথা। সন্তানের চাওয়া পাওয়াকে অগ্রাধিকার দিয়ে প্রশান্তি পান কিন্তু ভবিষ্যৎ ভাবার সময় তখন থাকে না। ফলে এখানেই বিপত্তি ঘটে।
সন্তানকে মানুষের মতো মানুষ গড়তে সবার আগে প্রয়োজন উপযুক্ত শিক্ষা। কেন না সৃষ্টিগত কোনো যোগ্যতা বা ঘাটতি শিশু মায়ের পেট থেকে নিয়ে আসেনা বরং মায়ের ক্ষুদ্র গর্ভ থেকে পৃথিবী নামক এক বিশালাকার গর্ভে পদার্পণ করে, পারিপার্শ্বিক অবস্থা, সমাজ, সংসার, বন্ধু-বর স্কুল থেকে প্রাপ্ত শিক্ষা তার ভবিষ্যৎ জীবনের গতিপথ নির্ণয় করে দেয়। তাই শিশুর প্রাথমিক জীবনের পরিবারের ভূমিকা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ, ছোট বেলায় শিশুদের যা শেখানো হয় বড় হয়ে শিশুরা তাই করে। সুতরাং খুব খেয়াল রাখতে হবে শিশুদের আচরণের উপর এবং ধৈয্য ধরে তাদেরকে গড়ে তুলতে হবে।
বর্তমানে যে শিক্ষা ব্যবস্থা রয়েছে তা শিশুর সার্বিক কল্যাণে অক্ষম। শিক্ষাবিজ্ঞানের ভাষায় শিক্ষা হল শরীর মন ও আত্মার বিকাশ সাধনকারী ব্যবস্থা। রবীন্দ্রনাথের মতে, শিক্ষা হল মানুষের অভ্যন্তরীণ সত্তার পরিচর্যা করে খাঁটি মানুষ বানানোর প্রচেষ্টা। বর্তমান পাঠ্যসূচীতে শরীর ও মনের উন্নয়ন ঘটাতে পারলেও আত্মার উন্নয়ন বা আত্মিক উন্নয়ন সম্ভব নয়। কেননা আধুনিক শিক্ষা ঈশ্বর বিমুখ। তাইতো সুকৌশলী ভবিষ্যৎ স্রষ্টা আল্লাহ কত সুচারুভাবে শিক্ষার উদ্দেশ্য ঘোষণা করেছেন ‘পড়ো। তোমার প্রভুর নাম যিনি তোমাকে সৃষ্টি করেছেন এবং কলমের জ্ঞান দিয়েছেন। (সূরা আলাক-১)।
শিক্ষাব্যবস্থার আদর্শিক ভিত্তি হিসাবে RRR অর্থাৎ Reading, Writing and Arithmetic এর কথা বলা হয়, কিন্তু শিক্ষাবিজ্ঞানী Stanly Hun-র মতে, তুমি যদি তিনটি R অর্থাৎ পড়া, লেখা এবং অঙ্কদান কর আর চতুর্থ টিকে অর্থাৎ R (Religion)-কে বাদ দাও তাহলে বর্বরতাই পাবে।
অতএব আদর্শ নাগরিক বা মানুষ গড়ার জন্য পরিবার জীবন থেকেই শিশু শিক্ষার পাঠ শুরু হতে হবে। এর জন্য বাবা-মাকেই অগ্রণী ভূমিকা গ্রহণ করতে হবে। শিশুর জীবনে বাবা-মাকেই শিশুর মডেল হতে হবে। কেননা শিশুরা খুবই অনুকরণ প্রিয়, তাই তারা বাবা মাকে দেখে যাতে ভদ্রতা, নম্রতা, সত্য কথা বলতে শিখবে।
এর জন্য বাবা মায়ের যা যা করণীয়
1. সবাই এক সঙ্গে খাওয়া।
2. বাজারে যাওয়ার সময়ে নিযে যেতে পারে না।
3. রান্নার সমযে ডেকে নিতে পারেন, যাতে সে ৱুঝবে কত কষ্ট করে রান্না করনে মা।
4. সব কাজকে সম্মান করতে শেখা।
5. ভালো কাজে প্রশংসা করা।
6. ভুল করলে বুঝিয়ে দেওয়া। সর্বপরী এমন কিছু করে দেখানো যাতে তারা আপনাকে অনুসরণ করে। এমন কিছু না করা যাতে তাদের মনে সন্দেহ জাগে।
7. নিয়মিত ইসলামের আসর বসিয়ে একসাথে ইসলামের শিক্ষা চর্চা করা।
8. মহৎ ব্যক্তিদের জীবনী পাঠ।
9. কবিতা, গান চর্চা।
10. হারাম হালাল, সৎ-অসৎ সৃষ্টি করা প্রভৃতি।
অর্থাৎ সন্তানের প্রথম শিক্ষক হিসাবে আপনি সন্তানকে যেভাবে গড়বেন আপনার ভবিষ্যত্ সন্তান সেইভাবে তৈরী হবে। যেমন মাটির কলস তৈরী করার প্রাথমিক পর্যায়ে একজন শিল্পী যেভাবে যতবেশি নিপুণতার সাথে বলতে বানাতে পারে মাটির কলসটি ততই সুন্দর হয়।