Literature

রঙিন দুনিয়ার প্রখর দাবদাহে যুব সমাজের প্রতি আরিফ আজাদ যেন রহমতের বর্ষণ! – মোসলেমা খাতুন তুলি

301views

স্মার্টফোন আর গ্লোবাল ভিলেজের এই দুনিয়ায় নিজেকে লুকিয়ে রাখা শুধু কষ্টসাধ্য নয়, বরং দুঃসাধ্য। নিজেকে বা নিজের শৈল্পীক সত্তাকে প্রচারের আলোয় নিয়ে আসতে চায় না এমন মানুষ সত্যিই বিরল। আর মানুষের সহজাত প্রবৃত্তিই হল সুনাম, যশ, খ্যাতি ও সম্মানের পিছনে ছুটে চলা। বিশেষত, সাহিত্য বা লেখালেখির জগতে কোন লেখক শুধুই তাঁর ভাষার বাঁধনে জনপ্রিয়তা অর্জন করবে এবং নিজেকে প্রকাশ্য লাইমলাইটে তুলে ধরবে না, এমনটা এই যুগে হয় না। ইতিহাসের পাতা উল্টে পিছনের দিকে হেঁটে গেলে এমন বহু উদাহরণ মিলবে বটে, কিন্তু সেই সব লেখক রাষ্ট্র শক্তি বা ধর্মীয় গোঁড়াদের রোষানলে পড়ার ভয়ে ছদ্মনাম ধারন করে লেখার জন্য প্রসিদ্ধ।

আজকের দিনে প্যারাডক্সিকাল সাজিদের লেখক আরিফ আজাদের নাম শোনেনি এমন বইপ্রেমী মানুষ পাওয়া যায় না। বাংলাদেশের আরিফ আজাদ বর্তমানে এক স্রষ্টায় বিশ্বাসী সাহিত্যপ্রেমীদের হৃদয়ের স্পন্দন বলা যায়। শীতের সন্ধ্যায় বইমেলার স্টলগুলোতে ক্রেতাদের ভিড় জমবে এটা স্বাভাবিক ঘটনা। কিন্ত সেটা যখন ইসলামী বইয়ের জন্য তখন তা সত্যিই নজর কাড়ে। বাংলাদেশের বইমেলায় এখন বেস্ট সেলার বলতে একটাই নাম উঠে আসে, আরিফ আজাদ। কিন্তু কোন এক অজ্ঞাত কারণে তিনি প্রকাশ্যে আসতে নারাজ। শুধু নারাজই নয়, বরং নিজেকে লুকিয়ে রেখেছেন। একজন সফল এবং বহুল পঠিত লেখক আরিফ আজাদেকে দেখেছেন এমন ব্যক্তি হাতেগোনা। বর্তমানে সোশ্যাল মিডিয়ার যুগে মাইক্রো সেকেন্ডে একটি ছবি দুনিয়াকে দেখানো যায়, তবুও পুরো সোশ্যাল মিডিয়া জুড়ে একটিও ছবি না থাকা মানুষটির নাম আরিফ আজাদ। এমনকি সোশ্যাল মিডিয়ার বিভিন্ন লাইভ অনুষ্ঠানে তিনি লেখার মাধ্যমে নিজের কথাগুলো বলেন, কণ্ঠস্বর শোনাতে আগ্রহী নয়।

বাংলাদেশের চট্টগ্রামে ১৯৯০ সালের ৭ই জানুয়ারি জন্মগ্রহণ করেন এই তরুণ লেখক। চট্টগ্রাম জিলা স্কুল থেকে মাধ্যমিক পাশ করে সরকারি কলেজে ভর্তি হন আরিফ আজাদ। তারপর তিনি চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়াশোনা করেন। শোনা যায়, তাঁর স্ত্রীও বিবাহের আগে জানতেন না তিনি কত বড় মাপের লেখক। এই বিস্ময়কর সাহিত্যিকের শুরুটা হয়েছিল ২০১৭ সালে প্যারাডক্সিকাল সাজিদের মধ্য দিয়ে। স্রষ্টায় অবিশ্বাসী নাস্তিকদের জবাব দিতে তাঁর অনন্য সৃষ্টি সাজিদের চরিত্র। সমাজে একশ্রেণীর মানুষ রয়েছে যারা নিজেদের মুক্ত-চিন্তাশীল দাবি করে ইসলামকে হেয় প্রতিপন্ন করে থাকে। তাদেরকে দাঁতভাঙা জবাব দিতেই তাঁর এই চরিত্র। তাঁর এই বই অসংখ্য সাজিদকে ইসলামের পথে ফিরিয়ে নিয়ে এসেছে।

‘বেলা ফুরাবার আগে’ আরিফ আজাদের দ্বিতীয় মাষ্টার স্ট্রোক। মুসলিম যুব সমাজের অন্ধকার জগৎকে তিনি অতি সুন্দরভাবে চিত্রায়িত করেছেন এই বইয়ে। নারী-পুরুষের অবাধ মেলামেশা বা ভার্চুয়াল জগতে তাদের পদস্খলন নিয়ে বাস্তবিক উপস্থাপনা এই বই। গহীন অন্ধকারে হারিয়ে যাওয়া তরুণ সমাজকে ফিরিয়ে নিয়ে আসার গল্প ফুটে উঠেছে তাঁর সাড়া জাগানো লেখা ‘প্রত্যাবর্তনে’। শুধুমাত্র শুক্রবার মসজিদে জুম্মার নামাজ আদায় করতে যাওয়া যুবক দৈনন্দিন জীবনে সিগারেট, পর্ণগ্রাফি, বিবাহ বহির্ভূত প্রেমে জর্জরিত। তাঁর ইসলামের পথে প্রত্যাবর্তনের হৃদয়-ছোঁয়া চিত্র অঙ্কন করেছেন আরিফ আজাদ। আরিফ আজাদের লেখা ‘মা, মা, মা এবং বাবা’ বইটির নাম পবিত্র কুরআনে প্রদত্ত মাতাপিতার অধিকারের কথা স্মরণ করিয়ে দেয়। এই দুনিয়ায় সব থেকে নিখাদ এবং নিঃস্বার্থ একটি সম্পর্কের জালে আবদ্ধ সন্তান এবং মাতাপিতা। শুধুমাত্র সন্তান জন্ম দেওয়ার সময় মা যে পরিমান কষ্ট সহ্য করে তা মৃত্যু মুখে পতিত হওয়ার কষ্টের থেকে কিছু অংশ কম। তারপর শৈশব, কৈশর এবং যৌবনে বেড়ে উঠার পিছনে তাঁদের অবদান তুলনাহীন। কিন্তু জীবনের কোন এক ক্রান্তিলগ্নে মাতাপিতাকে অবহেলার পাত্রে পরিণত করে মানুষ। এইরকম হৃদয়ের রক্তক্ষরণ ঘটানো একগুচ্ছ গল্প নিয়ে সাজানো এই বই যা চোখের কোণে অজান্তেই অশ্রু বইয়ে দেয়।

সাদা পাতায় কালো কালির ছোয়া দিয়ে যে যুব সমাজের বুকে এক নীরব পরিবর্তন সাধিত হতে পারে তা রূপায়ন করেছেন সময়ের নতুন প্রদীপ আরিফ আজাদ। আরিফ আজাদকে বর্ণনা করতে গিয়ে বিশিষ্ঠ সাহিত্যিক ডঃ শামসুল আরেফিন বলেছেন, ”আরিফ আজাদ একজন জীবন্ত আলোকবর্তিকা”। আর তাঁর বহু বইয়ের প্রকাশক, গার্ডিয়ান প্রকাশনী আরিফ আজাদের পরিচয় দিতে গিয়ে লিখেছে, “তিনি বিশ্বাস নিয়ে লেখেন, অবিশ্বাসের আয়না চূর্ণবিচুর্ণ করেন।” দুনিয়ার রঙিন স্রোতের অনুকূলে ভাসতে থাকা দিশাহীন এক যুবসমাজ হঠাৎ করে যেন সাহারা খুঁজে পেয়েছে। সময়ের চোরাবালিতে হারিয়ে যাওয়া যৌবনের সার্থকতার ঠিকানা খুঁজতে তরুণেরা এখন ছুটে যায় আরিফ আজাদের বইয়ের তাকে। তাই উপসংহারে বলা যায়, রঙিন দুনিয়ার প্রখর দাবদাহে যুব সমাজের প্রতি আরিফ আজাদ যেন রহমতের বর্ষণ।

1 Comment

Leave a Response