যোজনা কমিশন বাতিল করে মোদি সরকার এনেছে নীতি আয়োগ। মুঘল সম্রাট ঔরঙ্গজেবের নাম পরিবর্তন করে দিল্লির রাস্তার নাম হয়েছে আব্দুল কালামের নামে। মুঘলসরাই স্টেশন হয়ে গেছে দীনদয়াল উপাধ্যায়। এবার কোপ ইউজিসি অর্থাৎ ইউনিভার্সিটি গ্রান্টস কমিশনের উপর। মোদির ট্রান্সফর্মিং ইন্ডিয়া আর আচ্ছে দিনের স্বপ্ন সফল করতে নতুন পদক্ষেপ হিসেবে হায়ার এডুকেশন কমিশন অফ ইন্ডিয়া (হেকি) বিল আনতে চলেছে।১৯৫৬ সালে প্রতিষ্ঠিত মৌলানা আযাদের ব্রেনচাইল্ড এই নিয়ামক সংস্থাকে কেন বাতিল করতে চায় সরকার? পুরনো স্মৃতি মুছে ফেলাই কি মূল উদ্দেশ্য, না কি পিছনে অন্য কিছু?
কেন্দ্রীয় মানবসম্পদ উন্নয়ন মন্ত্রকের দাবি, উচ্চশিক্ষা কমিশন সংক্রান্ত নতুন খসড়া বিলটিতে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলিকে আরও ক্ষমতা দেওয়া হবে। অথচ, খসড়া বিল বলছে— কোনও শিক্ষা প্রতিষ্ঠানকে আর্থিক অনুদান দেওয়ার বিষয়টি আর কমিশনের হাতে থাকবে না। সেটি নিয়ন্ত্রণ করবে মন্ত্রক, বকলমে কেন্দ্র। বিলের ওই ধারাটি নিয়েই প্রশ্ন তুলেছে দিল্লি বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সংগঠন ডুটা। তাদের মতে, এক দিকে স্বায়ত্তশাসনের কথা বলা হয়েছে বিলে। অন্য দিকে অর্থ বরাদ্দের মতো বিষয়টি কেন্দ্র নিজের এক্তিয়ারে রেখে দিচ্ছে। দু’টি যুক্তি পরস্পরবিরোধী।
মোদি সরকারের পাল্টা যুক্তি— এ ক্ষেত্রে স্বায়ত্তশাসন বলতে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলিকে আরও বেশি প্রশাসনিক সিদ্ধান্ত নেওয়ার সুযোগ দেওয়া হবে। পড়ুয়া ভর্তি বা বিষয় নির্বাচনের স্বাধীনতাও পাবে প্রতিষ্ঠানগুলি। ইনস্পেক্টর রাজ বন্ধ হবে। শিক্ষার গুণগত মানের উৎকর্ষ বৃদ্ধিতে জোর দেবে কমিশন। প্রয়োজনে নিম্ন মানের শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলিকে বন্ধ করে দেওয়ার দায়িত্ব থাকবে কমিশনের হাতে।
কেন্দ্রের ওই যুক্তি মানছেন না জুটা বা জহওরলাল নেহরু বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকদের একাংশ। তাঁদের বক্তব্য, এর আগেও দু’বার ইউজিসি বাতিল করার প্রস্তাব এনেছিল সরকার। কিন্তু তা হয়ে ওঠেনি। এ ক্ষেত্রেও বিস্তারিত আলোচনা না করে, ইউজিসি-র খামতিগুলিকে সংশোধন না করে ওই পদক্ষেপ আদৌ যুক্তিযুক্ত নয়। তা ছাড়া আর্থিক অনুদান দেওয়ার প্রশ্নে কেন্দ্রের খবরদারির প্রশ্নটি নিয়ে এখন থেকেই সুর চড়ানোর পক্ষে বিজেপি-বিরোধী রাজ্যগুলি।
উচ্চশিক্ষায় দলতন্ত্র কায়েম করতে চাইছে সরকার। নিয়ন্ত্রকের ভূমিকায় সরাসরি শাসক দলের লোকের হাতে রাখার সুনিপুণ একটি পরিকল্পনা তৈরি করেছে মোদি অ্যান্ড কোং। শিক্ষার প্রশাসনিক কর্মকাণ্ডে কোনও রকম হাত থাকবে না এই কমিশনের। সেজন্য কমিশনের ১২ জন সদস্যকেই নির্বাচন করবে সরকার। চেয়ারপার্সনএবং ভাইস চেয়ারপর্সন নির্বাচন করবেন এই ১২ জন সদস্য। কমিশনে থাকবেন উচ্চশিক্ষা সচিব এবং কারিগরি দক্ষতা মন্ত্রকের সচিব। এছাড়াও থাকবেন বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি মন্ত্রকের সচিব। এআইসিটিই—র চেয়ারপার্সন এবং এনসিটিই–র চেয়ারপার্সন এবং দুই বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্যরা থাকবেন এই এই কমিশনে।
উচ্চশিক্ষার মান, সিলেবাস, কীভাবে পড়ালে দক্ষতা আরও বাড়বে, শিক্ষার ফলাফল সহ একাধিক বিষয়ে নজর রাখবে এই উচ্চ শিক্ষা কমিশন। প্রশাসনিক কোনও কাজে তাঁদের মাথা ঘামাতে হবে না। বিরোধীদের দাবি এবার উচ্চ শিক্ষারও গৈরিকীকরণ করার লক্ষ্যে এগোচ্ছে মোদি সরকার। নিয়ন্ত্রণ যদি কমিয়ে বিশ্ববিদ্যালয়গুলিকে স্বায়ত্তশাসন দেওয়াই মূল উদ্দেশ্য হয়, তবে তার জন্য নতুন কমিশনের দরকার কী? আর অর্থ বরাদ্দের ভার কেন্দ্র সরকার নিজের হাতে রাখতে চাইছে। জেএনইউ,যাদবপুরের মতো বিশ্ববিদ্যালয়গুলিকে ‘শাসন’ করতেই এই কৌশল নয় তো? প্রশ্ন উঠে আসছে একের পর এক।