বিশ্বাসের সঙ্গে যেখানে হাত মিলিয়েছে প্রখর যুক্তিবোধ
আফরিদা খাতুন আঁখি
প্যারাডক্সিক্যাল সাজিদ ১, ২
আরিফ আজাদ
সময়ের প্রতিটি বাঁকে সমস্যারা এক এক অভিনব রূপ নিয়ে আমাদের সামনে বারবার উপস্থিত হয়। বর্তমানে সমাজে সমস্যাগুলি ইসলামের প্রতি বিদ্বেষ, নাস্তিকতাবাদ ইত্যাদি রূপ নিয়ে উপস্থিত হয়েছে। যা ব্যাধির মতো ছড়িয়ে পড়েছে সর্বত্র। মারণাত্মক এই ব্যাধিগুলো খুবই সন্তর্পণে বিকল করে দিচ্ছে তারুণ্য দীপ্ত মস্তিষ্কগুলো, প্রভুর প্রতি বিশ্বাসে সৃষ্টি করছে সূক্ষ্ম চিড় যা পরবর্তীতে পরিণত হচ্ছে বিশাল গহ্বরে।
তাত্ত্বিকতার বেড়াজাল থেকে সম্পূর্ণ মুক্ত হয়ে লেখক আরিফ আজাদ প্যারাডক্সিক্যাল সাজিদ নামক দুই খণ্ডের এই বইয়ে বিশ্বাসীর বিশ্বাসকে আরো দৃঢ় করতে, অবিশ্বাসের রুদ্ধ মনে বিশ্বাসের আলো জ্বালতে, নাস্তিকদের এবং ইসলাম বিদ্বেষীদের যোগ্য জবাব দিতে হাঁটা দিয়েছেন তরুণ দের সাথে অনেকটা তাদের মতো করেই। সমগ্র বইয়ে ভাষা শৈলী, সাহিত্যের নিপুণতার যে সমাহার ঘটেছে তা দেখে আসলেই বিশ্বাস করা শক্ত হয়ে ওঠে ‘প্যারাডক্সিক্যাল সাজিদ’ লেখকের প্রথম বই।
‘প্যারাডক্সিক্যাল সাজিদ ১’ এবং ‘প্যারাডক্সিক্যাল সাজিদ ২’ এই দুটি বইয়ে সম্মানিত লেখকের উপস্থাপনে সাদৃশ্য থাকার কারণে বই দুটির রিভিউ একইসাথে উপস্থাপন করা হলো। ‘প্যারাডক্সিক্যাল সাজিদ ১’ সমগ্রটাতেই নাস্তিকবাদ এবং ইসলামের প্রতি বিদ্বেষকে খণ্ডন করা হয়েছে আর ‘প্যারাডক্সিক্যাল সাজিদ ২’ তে নাস্তিকতাবাদের সাথে খৃষ্টবাদকে খণ্ডন করা হযেছে।
বই দুটিতে লেখক আমাদের সাথে সাক্ষাত করিয়েছেন সাজিদ নামে এক বুদ্ধিদীপ্ত যুবকের । অবিশ্বাসের গাঢ় অন্ধকারে একদিন হাতড়ে বেড়ানো সাজিদ বর্তমানে প্রভুর রহমতের নহরে স্নাত এক জীবন্ত সত্তা হিসাবে, শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত যে বহন করেছে প্রভুর বিশ্বাসের প্রতীক। সাজিদ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের, ফিজিক্স বিভাগের এক দীপ্ত ছাত্র হলেও তার পচহন্দের বিষয় তার পাঠ্য বই ছাড়া অন্য বই অধ্যয়ন করা এবং ভ্রমণ। তার অবসরের বেশির ভাগ সময় অতিবাহিত হয় ইতিহাস এবং তুলনামূলক ধর্ম তত্ত্বের বইয়ের গভীরে জ্ঞানান্বেষণ করে। তার অর্জিত জ্ঞান দিয়ে যেমন ভাবে প্রভুর প্রতি তার বিশ্বাসকে আরো শানিত করে নেয় ঠিক তেমনি ভাবে তাকে ক্লাসে ‘আইনস্টাইন’ বলে বিদ্রুপ করা মহিজুল স্যার সহ শিক্ষকমণ্ডলী থেকে তার দিকে ছুটে আসা ইসলামকে নিয়ে বিদ্রুপাত্মক প্রতিটি প্রশ্নের যুক্তিপূর্ণ জবাব দেয়। ইউনিভারসিটি ক্যান্টিন অথবা চায়ের আড্ডাতে নাস্তিক নীলু দা অথবা বিপ্লব দা যতবারই ইসলামকে নিয়ে কটুক্তি করে ভূলুণ্ঠিত করতে যায় ততবারই সে তার শান্ত কিন্তু শাণিত যুক্তি দিয়ে খণ্ডন করে তাদের ভুল ধারণার জালকে ছিন্ন করেছে। সেই সমস্ত কটুক্তি যা আমাদের প্রতিনিয়ত শুনতে হয়। জ্ঞানের অভাবে আমাদেরকে এই কটুক্তির যোগ্য জবাব না দিতে পেরে সর্বদা ছোট হয়ে থাকতে হয়। সাজিদের এই বিচক্ষণতা দেখে তার সকল সময়ের সাথি তার প্রিয় বন্ধু আরিফও অভিভূত হয়েছে বারবার।
প্যারাডক্সিক্যাল সাজিদ ১’ এবং ‘প্যারাডক্সিক্যাল সাজিদ ২’ এই দুটি বইয়ের মাধ্যমে তরুণ লেখক আরিফ আজাদ একাধারে ভ্রান্তির স্রোতের গড্ডলিকাতে ভেসে যাওয়া যুব সমাজকে বাতলে দিয়েছেন সঠিক পথ। মুসলিম যুবাদের কোমল কিন্তু দৃঢ়তার সাথে স্মরণ করিয়ে দিয়েছেন তারা হল সেই জাতি যাদের উদ্দেশ্যে প্রভুর প্রথম বার্তা ছিল ‘পড়ো’। ইসলাম যে আসলেই একটি জীবন্ত জীবন বিধান সেই উপলব্ধি মিশে রয়েছে প্রতিটি পাতায়।
একজন মুসলিম হিসাবে ইসলামের ব্যাপারে সমাজে প্রচলিত ভ্রান্তির যথোপযুক্ত খণ্ডের জন্য যেমন এই বই পাঠ করা প্রয়োজন ঠিক তেমনভাবে নিজের ভিতরের সত্তাকে খুঁজে পাওয়ার জন্য। কালো মলাটে বাঁধানো এই বই দুটির পাতায় পাতায় এতো আলো লুকিয়ে আছে তা পাঠ না করলে উপলব্ধি করা সম্ভব নয়। পাঠ করার পর অস্ফুট স্বরে একটি কথায় উচ্চারিত হয়, ‘আমাকেও সেই বিশ্বাসে বিশ্বাসী করা হয়েছে যার প্রতি বাঁকে রয়েছে পরম প্রশান্তি’। অবশেষে লেখকের মতো একটি কথাই বলতে চাই বইটি পাঠ করার পর যদি আপনার বইটি ভালো লেগে থাকে তাহলে বইটি নিজের কাছে না রেখে দিয়ে বইটি কোনও এক শুষ্ক হৃদয়ের মানুষের কাছে পৌঁছে দিন যাতে তার অন্ধকার হৃদয় আলোকিত হয়।
আলোচক Socio Educational Research Centre (SERC)এর গবেষক