
আয়াজ আহমেদ ইসলাহী
২২ জুন। পিসি হামজার মৃত্যু সংবাদ আমার কাছে ব্যক্তিগত আঘাত সমতুল্য। তারুণ্য ভরা একজন টগবগে লিডার, বেশ কিছু দিন থেকে ক্যান্সার নামক মারণব্যাধিতে ভুগছিলেন, তিনি চিকিৎসা নিচ্ছিলেন। বয়স হয়েছিল ৬২ বছর ।
তার বাড়ি ছিল কেরালার পালঘাট এলাকায। তিনি একজন বিখ্যাত সমাজসেবক, কমিউনিটির লিডার ছিলেন। ছিলেন রাজনৈতিক নেতাও। সেইসাথে তিনি সাংবাদিকতাও করেছেন।প্রায় দু’দশক আগে ব্যাঙ্গালুরু থেকে ্প্রকাশিত এক ম্যাগাজিনের আত্মপ্রকাশের সময় তিনি গুরুত্বপূর্ন ভূমিকা পালন করেছিলেন। সামলেছেন সম্পদকের দাযিত্ব। যদিও পরবর্তী কালে অর্থনৈতিক কারণে ম্যাগাজিনটি বন্ধ হযে গিয়েছিল।
তিনি অত্যন্ত বিনয়ী স্বভাব,আন্তরিক হৃদয়ের মানুষ হিসাবে পরিচিত। চেনা, জানা অজানা সকল মানুষের সাথে সমান ভালোবাসা এবং আন্তরিকতা নিয়ে সাক্ষাৎ করতেন। পিসি হামজা কেন্দ্রীয় জামায়াতে ইসলামীর শুরা সদস্য এবং মিল্লাতের নেতা ছিলেন। একদা যৌবন কালে তিনি ভারতবর্ষের সব চাইতে শক্তিশালী, বড় এবং সু-শৃঙ্খল ছাত্র সংগঠন এস আই ও-র কেন্দ্রীয় সভাপতির দায়িত্ব পালন করেন। ১৯৯১ সালে তিনি এস আই ও-র কেন্দ্রীয় সভাপতি নির্বাচিত হন । জামিয়া মিলিয়া ইসলামিয়ার ছাত্র হিসাবে দিল্লিতে অবস্থানকালে তার মত প্রাণবন্ত নেতৃত্বে কাজ করেছি। পিসি হামজা যখন কেন্দ্রীয় সভাপতি ছিলেন, তখন আমি দিল্লি জোনের সভাপতি ছিলাম। আমার পর্যবেক্ষণ মোতাবেক দ্রুত এবং সাহসী সিদ্ধান্ত নেওয়া তার চরিত্র গুণাবলীর অন্যতম। একটি উদাহরণ হিসেবে বলতে পারি- তত্কালীন কেন্দ্রীয় সরকার জামিয়া মিলিয়া ইসলামিয়াকে তার সংখ্যালঘু চরিত্র নষ্ট করে পরিপূর্ন কেন্দ্রীয় বিশ্ববিদ্যালয় রূপান্তরিত করার জন্য একটি বিল এনেছিল, জাতীয় পর্যায়ে এই বিল বিরোধী অভিযান চালায় এসআইও।
যদিও তার আগে, জামিয়া’র সকল শিক্ষক, ছাত্র, প্রশাসনিক কর্মকর্তা এমনকি যারা প্রাক্তনী সবাই এই বিলের বিরোধিতা করে। পারিপার্শিক সকল বিষয় বিবেচনা করে এস আই ও দিল্লি জোন জামিয়া কমিউনিটির সাহায্য এই আইনের বিরুদ্ধে জন সচেতনতা গড়ে তোলে। প্রতিবাদ চলা কালীন আমি আমার কেন্দ্রীয় সভাপতির সাথে সাক্ষাতের সিদ্ধান্ত নিই এবং সংশ্লিষ্ট ইস্যুতে বিভিন্ন দিক নিয়ে আলোচনা করি। আমি যখন তার সাথে সাক্ষাত করি তখন অফিসে একাই ছিলেন। আলোচনা চলাকালে তাকে আমি জাতীয় পর্যায়ে বিলের বিরোধিতা করার অনুরোধ করি। আমি অবাক হই,তিনি আমার কথা শুনে কয়েক সেকেন্ডের মধ্যে সিদ্ধান্ত নেন যে কেন্দ্র সারা দেশ জুড়ে সকল স্তরে এই বিলের বিরোধিতা করে ক্যাম্পেইন হবে৷ এস আই ও- র ইতিহাসে এটি একটি অত্যন্ত সফল এবং প্রভাব বিস্তারকারী ক্যাম্পেন। এই সিদ্ধান্তে এস আই ও এবং জামিয়া উভয়ে বহুলাংশে উপকৃত হয়েছিল। খোলাখুলি বলতে, এই আমাকেও লিডার হিসাবে গড়ে তুলেছিল এবং আত্মবিশ্বাস এনে দিয়েছিল। এর সকল ক্রেডিট সেই মানুষটির যিনি কয়েক দিন আগে দুনিয়া ছেড়ে বিদায় নিলেন।
পাশা পাশি তিনি মৃদু ভাষী, সাহায্যকারী এবং নরম দিলের মানুষ ছিলেন। নিশ্চই তিনি ইসলামকে ব্যবহারিক জীবনে – পূর্ণাঙ্গ জীবন বিধান হিসাবে অনুসরণের চেষ্টা করেছেন। আমি তার জীবনে কোন বৈষম্য, অবাঞ্ছিত আচরণ, বে-ইনসফি উদ্ধত দেখেনি। যেটি ক্ষমতা বা বিত্তশালীদের ক্ষেত্রে প্রায়শই লক্ষ করা যায। বস্তুত তার পুরো ব্যক্তিত্ব ছিল ভালোবাসা ও স্নেহ দিয়ে পরিপূর্ণ। তিনি সবাইকে ভালোবাসতেন, সবাই তাকেও ভালো বাসতো। সদা হাসিময় মিষ্টি মুখে সাক্ষাত্ করতেন। তার মৃতুই ইসলামী আন্দোলনের জন্য দুঃখের। আল্লাহ যেন তাকে জান্নাতুল ফিরদাউস দান করেন। এবং আমাদের এই ক্ষতি পূরণ করার তৌফিক দান করেন। আমিন। আমি তার পরিবারকে হৃদয় থেকে সমবেদনা জানাই এই কঠিন সময়ে।
লেখক – আরবি সাহিত্যের অধ্যাপক, লখনউ বিশ্ববিদ্যলয়