সাদ্দাম হোসেন
ভারত পৃথিবীর সত্তম বৃহত্তম দেশ, যা মানব সম্পদের সমৃদ্ধি তথাপি স্বাধীনতা লাভের ৭২ বছর পরেও এই দেশ আর্থিক দিক থেকে প্রত্যাশিত মাত্রায় উন্নতি করতে পারেনি। প্রায় ১৩০ কোটি মানুষের দেশে এখনও উন্নয়ন প্রাথমিক স্তরে বদ্ধ হয়ে রয়েছে এবং তার প্রকৃত কারণ হল আমাদের দেশে সর্বস্তরে দুর্নীতি বিরাজমান। এমনকি ভারতবর্ষ বিশ্ব দুর্নীতি সূচক তালিকায় ১৮০ টি দেশের মধ্যে ৭৮ তম স্থান দখল করে রয়েছে।
ভারতে যথেষ্ট পরিমানে প্রাকৃতিক সম্পদ ও মেধাপূর্ণ মানব সম্পদ থাকা সত্ত্বেও আমাদের দেশের অগ্রগতি তেমনভাবে হয়নি। এমনকি এখনও ভারতের ২৮.৫ শতাংশ নাগরিক দারিদ্র সীমার নিচে বসবাস করেন। বেকারত্ব , অশিক্ষা ও কুশিক্ষা দেশের জন্য অভিশাপ সরূপ। আইএলও সমীক্ষা অনুযায়ী ২০১৮ সালে ভারতে বেকারত্বের সংখ্যা ছিল ১৮ কোটি ৬০ লক্ষ। রাজ্যগুলির বেকারত্বের হিসেবের দিকে তাকালে দেখা যাচ্ছে যে, ভারতীয় অর্থনীতি পর্যবেক্ষক সমীক্ষা অনুযায়ী বিজেপি শাসিত রাজ্যে ত্রিপুরায় বেকারির হার সবচেয়ে বেশি ২৬.১ শতাংশ, বেকারির হার সবচেয়ে কম ১.৪ শতাংশ। পশ্চিমবঙ্গের বেকারির হার ৬.১ শতাংশ ।
কৃষিকাজে যোগদান নতুন প্রজন্মের অনীহা এবং কৃষির দুরাবস্থা বেকারত্বের বাড়ার একটি কারণ। ২০১১ আদমশুমারি অনুযায়ী ২৫.৯৬ শতাংশ নিরক্ষর যা দেশের জন্য অভিশাপ। অশিক্ষা, কুসংস্কার ভারতে অগ্রগতিকে বাধা সৃষ্টি করছে। আর এর আসল কারণ হল দুর্নীতি। এই দুর্নীতি হার প্রশাসন তথা সাধারণ নাগরিক জড়িত, তাই দেশের উন্নয়ন পদে পদে বাধা প্রাপ্ত হচ্ছে।
দেশের জাতীয় সমস্যা দুর্নীতি প্রতিরোধ করা। তাই তরুণ ও যুবকদের দুর্নীতি প্রতিরোধে এগিয়ে আসতে হবে। দুর্নীতির বিরুদ্ধে শান্তিপূর্ণ অবস্থান গ্রহণের মাধ্যমে সুখী-সমৃদ্ধ ও প্রগতিশীল দেশ গড়ার অঙ্গীকার করতে হবে তরুণ যুবকদের। যেমনভাবে দুর্নীতিমুক্ত সমাজ গঠনের জন্য রাসুলুল্লাহ (সা.) জনসাধারণকে জানিয়ে বলেছেন, ‘তোমাদের মধ্যে যেকোনো অন্যায়কারী দুর্নীতিবাজকে দমনে সে যেন হাত দিয়ে প্রতিরোধ করে, যদি তা করতে না পারে তবে সে যেন মুখ দিয়ে প্রতিহত করে। যদি সে মুখ দিয়েও না পারে, তাহলে যেন অন্তর দিয়ে ঘৃণা পোষণ করে। (বুখারি)
স্বাধীনভারতের নাগরিক আজও অনাহারে মৃত্যু বরণ করে বা দারিদ্র্যের জ্বালা সহ্য করতে না পেরে অনেকেই আত্মহত্যার পথ বেছে নিতে বাধ্য হচ্ছে।
পরাধীন ভারতে ইংরেজরা শাসন করলে আমাদের দেশের নাগরিক (যেমন- ক্ষুদিরাম বসু, ভগৎ সিং, আসফাকুল্লা,প্রমুখ) স্বাধীনচেতা ছিলেন। কিন্তু আজকের যুবসমাজ মনমস্তিষ্ক এখনো পরাধীনতার সিকলে বাঁধা যেমন ১)একদল যুবক পশ্চিমা সংস্কৃতির গোলাম এরা ফেসবুক, টুইটার, গানবাজনা, যৌনোন্মাদ নিয়ে ব্যাস্ত থাকে সারাক্ষন ২) আর একদল যুবক আছে যারা রাজনীতিবিদদের গোলাম, এরা স্বাধীন চিন্তাভাবনা করেনা, রাজনীতিবিদরা যেইভাবে বলে সেইভাবে চলে, ক্ষুদ্র নিজের স্বাথের জন্য দেশের বৃহৎ স্বাথ জলাঞ্জলি দেয় ৩) আর একদল যুবক আছে যারা ড্রিগ্রী অর্জন নিয়ে ব্যাস্ত হোক সৎ বা অসৎ পথে তাতে কিছু যাই আসেনা, এরা নৈতিক দায়িত্ব সম্পক্য অবগত নয়। ৪)আর একদল যুবক আছে যারা দলিত, অবহেলিত, নিপীত, বঞ্চিত, লাঞ্ছিত, এরা দুমুঠো অন্ন জন্য যেকোনো কাজ করে থাকে, ভালো মন্দ বিচার বিবেচনা করা শক্তি থাকে। এই হলো স্বাধীন ভারতের যুবকদের পরাধীনতার প্রতিচ্ছবি। এর পরও কি আমরা বলবো আমরা দুর্নীতি মুক্ত স্বাধীন চেতনাবোধ সম্পন্ন নাগরিক।
ভারতীয় প্রশাসন ও নেতারা স্বচ্ছ ভাবমূর্তি ধরে রাখতে অপাগত। নানান ধরনের দুর্নীতির সঙ্গে জড়িত তারা যেমনঃ কয়লা কেলেঙ্কারী, ব্যাপন কেলেঙ্কারী, চপার, ২ জি, নারদা, সারদা, ওয়াকফ বোর্ড ল্যান্ড কেলেঙ্কারী সঙ্গে যুক্ত। কিন্তু অধিকাংশ ক্ষেত্রে দেখা গেছে যে সেই সব অভিযোগের সঠিক বিচার হয়নি কোন অজ্ঞাত কারণে। এই প্রসঙ্গে
পবিত্র কোরআনে সতর্কবাণী দেওয়া হয়েছে, ‘জলে-স্থলে মানুষের কৃতকর্মের দরুন বিশৃঙ্খলা ও অশান্তি ছড়িয়ে পড়ছে, যার ফলে আল্লাহ তাদেরকে তাদের কিছু কিছু কাজের শাস্তি আস্বাদন করাতে চান, যাতে তারা ফিরে আসে। (সূরা আর-রুম)
আজ আমরা স্পষ্ট ভাবে দেখতে পাচ্ছি যে প্রশাসনের উঁচু থেকে নিচু প্রায় সকল স্তরেই দুর্নীতি বিরাজমান। ক্ষমতাসীন ব্যাক্তিরা সরকারী ক্ষমতা ব্যবহার করে ব্যাক্তিগত স্বাদ্ধসিদ্ধি লাভ করেছে, আমজনতার কোন উন্নতি করেনি।
আমাদের দেশে জাতীয় আয় বৃদ্ধি পেলেও মাথা পিছু আয় বাড়েনি তার কারণ হল জাতীয় আয়ের সিংহভাগ দেশের মুষ্টিমেয় ধনী পরিবার গুলির হাতে কেন্দ্রীভূত।
আইএমএফের তালিকায় মাথাপিছু আয়ের নিরিখে আমাদের দেশ ১৮৭টি দেশের মধ্যে ১৩৯তম।
ভারতীয় অর্থনীতিতে অর্থনৈতিক সংস্কারের নামে কর ও দাম বাড়ানো হচ্ছে, এবং সেই টাকার দান খয়রাতি বিতরণের রাজনীতি চালাচ্ছে, তা থেকে সাধারণ মানুষ বিশেষ লাভবান হয়নি। এটাও একপ্রকার দুর্নীতির ফল।
এছাড়া দেশে প্রাকৃতিক বিপযয় ঘটলে দেখা যায়, যে পরিমান ত্রাণ সামগ্রী দুর্গতদের জন্য বরাদ্ধ করে সরকার তার সিংহভাগ মাঝ পথে হারিয়ে যায়। প্রশাসনের ত্রাণ বন্টনে থাকা কর্মীরা তা আত্মসাৎ করেন। কেন্দ্র রাজ্য নানা প্রকল্প আর্থিক ভাবে দুর্বল শ্রেণীর জন্য করে থাকে অথচ দেখা যায় প্রকৃত মানুষ না পেয়ে , যাদের তা প্রয়োজন নেই তারাই সেগুলি পেয়ে যায়। এর কারণ প্রশাসনিক অধিক কারীকরা তার গভীর জাল বিস্তার করে দিয়েছে। তাই দেশের অগ্রগতি কচ্ছপের গতিতে চলমান।
এরজন্য তরুণ যুবকরা দুর্নীতি প্রতিরোধে এগিয়ে আসতে হবে।
পাহাড় সমান দুর্নীতি দূর করার জন্য আদর্শবান ও সৎ তরুণ- যুবকদের সমাজকল্যাণমূলক কাজের নেতৃত্বে এগিয়ে আসা হবে। এই প্রসঙ্গে যেমনটি আল্লাহ তাআলা ঘোষণা করেছেন, তোমাদের মধ্যে এমন একটি দল হোক, যারা মানুষকে কল্যাণের দিকে আহ্বান করবে, সৎ কাজের আদেশ করবে এবং অসৎ দুর্নীতিমূলক কাজে নিষেধ করবে।( আলে ইমরান)
যুবসমাজের দ্বারা জনসচেতনতা মাধ্যমে সমাজ থেকে দুর্নীতির শিকড় উৎপাটন করা সম্ভব। দেশের যুব সমাজ অন্যয় দুর্নীতির বিরুদ্ধে আন্দোলন শুরু করলে দুর্নীতিপরায়ন লোকেরা দুর্নীতি পরিত্যাগ করতে বাধ্য হবে। এর জন্য চাই তরুণ যুবকদের সম্মিলিত ঐক্যমত ও সংঘবন্ধতা।
দুর্নীতি করবেন না এবং করতে সাহায্য করবেন না’ এই স্লোগান মানুষের মুখে মুখরিত করতে হবে। আমাদের ঘুমন্ত বিবেককে জাগাতে হবে, তবেই আমরা দুর্নীতিমুক্ত স্বচ্ছ প্রশাসন দেখতে পাব। তখন দেশের সম্পদ সমভাবে বন্টন হবে, কারো প্রাপ্ত অধিকার থেকে কেউ বঞ্চিত হবে না। তাহলে দেশ দ্রুত গতিতে অগ্রগতি ঘটবে। ভারত জগৎ সভায় শেষ্ঠ আসন লবে।