
কালের দাবীতে বিভিন্ন জায়গায় বিভিন্ন সময়ে বিভিন্ন নবী রাসূলদের আল্লাহ দুনিয়ায় পাঠিয়েছেন। যাতে করে তাঁরা পথভ্রষ্ট জনসাধারণকে সঠিক পথ দেখাতে পারে। জীবনের লক্ষ্য চিনিয়ে দিতে পারে। সে কিভাবে, কোথা থেকে এসেছে, কেন তাকে সৃষ্টি করা হলো, তাকে কোথায় ফিরে যেতে হবে, তার দায়িত্ব, তার হক্ব সম্পর্কে সম্যক ধারণা দিতেই যুগে যুগে নানা নবী রাসূলগনের নানা দলে নানা গোষ্ঠীর মধ্যে আগমন ঘটেছে। আমরা যদি প্রত্যেক নবী-রাসূলের পবিত্র জীবনচরিত পর্যালোচনা করি তবে দু’টি মৌল বিষয় সবচেয়ে বেশি দৃষ্টি আকর্ষণ করবে। প্রথমত, তাঁদের জীবনধারার অন্তর্নিহিত বৈপ্লবিক আদর্শ __ যার ছোঁয়ায় মানব সভ্যতায় এসেছে বৈপ্লবিক রুপান্তর । দ্বিতীয়ত, সেই আদর্শ সুষ্ঠু রূপায়নের জন্য তাঁদের নির্দেশিত বৈপ্লবিক কর্মনীতি __এক্ষেত্রে শেষ নবী হযরত মুহাম্মদ (সাঃ)-এর কর্মনীতি ও সাফল্য সবচেয়ে উল্লেখযোগ্য। যাঁর কর্মনীতির সুফলে একটি অসভ্য ও উচ্ছৃঙ্খল জনগোষ্ঠী পেয়েছিল বিশ্বের শ্রেষ্ঠতম সভ্যতা ও সংস্কৃতির শিরোপা।
দুঃখের বিষয় যে,আজকের মুসলিম মানস থেকে বিশ্বনবীর পবিত্র জীবনচরিতের এই মৌল বৈশিষ্ট্য দুটি প্রায় লোপ পেতে বসেছে। বস্তুত, আজকের মুসলিম মানসের এই ব্যর্থতা ও দীনতার ফলেই আমরা বিশ্বনবীর পবিত্র জীবনচরিত থেকে সমাজ ও রাষ্ট্রের কোনো বৈপ্লবিক রুপান্তর ঘটানোর তাগিদ অনুভব করছি না।
যাইহোক, আজকে আমরা রাষ্ট্রব্যবস্থা, শিক্ষা-সমাজ,অর্থনীতি এইসব গুরুগম্ভীর আলোচনা করবো না। আজ আসুন কিছু অজানাকে জেনে নিই। আজ আমরা আমাদের মাঝে অতি আলোচিত, সমাজ-রাষ্ট্রব্যবস্থার অন্যতম স্তম্ভ, ব্যবহারিক জীবনে বিস্তার লাভ করা সংবাদমাধ্যমের উৎস সন্ধানে যাবো। যুগে যুগে নবীয়ানা পদ্ধতির প্রভাব দেখে আসবো।
আজকের আলোচনা উপমহাদেশীয় প্রেক্ষাপটে নবীয়ানার পবিত্র সংস্পর্শ সমাজ,সাহিত্য, সংস্কৃতি, ইতিহাস,ঐতিহ্য তথা সাংবাদিকতার কত গভীরে পরিব্যাপ্ত তা খতিয়ে দেখা। যদিও আলোচনার ক্ষেত্র বিস্তর চর্চার দাবী রাখে।আমরা আমাদের সাধ্যমতো বিভিন্ন দিক আলোচনা করবো।
আমাদের সাহিত্য, কৃষ্টি,সংস্কৃতির প্রাচীন ইতিহাস ঐতিহ্য আলোচনা করতে গেলে যেমন ধর্মের প্রসঙ্গটি মুখ্য হয়ে আসে তেমনি সাংবাদিকতার বিষয়টিও ধর্মীয় ঐতিহ্যেরই অংশ। সৃষ্টিকর্তা পয়গাম্বরি ধারার সূচনার করেছেন হযরত আদম (আঃ)-কে পৃথিবীতে প্রেরণ করে।আদম (আঃ) যেমন প্রথম মানব তেমনি প্রথম নবীও। শুধু ইসলাম নয়,অন্যান্য ধর্মেও আদম (আঃ) ও ওহী বা ঐশ্বরিক বানী পাওয়ার কথা উল্লেখ আছে। সেগুলোকে বলা হয় দৈববাণী,প্রত্যাদেশ ইত্যাদি। আবার কোনো ধর্মে ধ্যানের মাধ্যমে জ্ঞানর্জনের বিষয়ও লক্ষ করা যায় যেমন বৌদ্ধ ধর্ম। অবশ্য সকল ধর্মেই ধ্যানের বিষয়টি আছে,এর মাধ্যমে সংবাদ প্রত্যাশী নিজেকে সংবাদ বহন করার যোগ্য করে তোলে।
আধুনিক সাংবাদিকতার সূচনাও কিন্তু ওই একই শিকড় থেকে আসা।সাংবাদিকতা এবং সংবাদপত্র এখন শিল্পের মর্যাদায় ব্যাপকভাবে চর্চিত-নন্দিত, সভ্যতার একমাত্র ধারক বাহক।হযরত আদম (আঃ), প্রথম মানব তেমনি প্রথম বানীবাহক তথা নবী।তাঁর প্রজন্মের নিকট আল্লাহর বানী পৌঁছিয়ে দেওয়ার দায়িত্ব তাঁকে অর্পণ করা হয়েছিল।পয়গম্বরি সাংবাদিকতার এই ধারা আদম (আঃ) থেকে মুহাম্মদ (সাঃ)পর্যন্ত কায়েম ছিল।মুহাম্মদ (সাঃ) পয়গাম্বর হিসাবে সবচেয়ে সাফল্য লাভ করেছিলেন।তিনি তাঁর জনগণের কাছে সঠিক ভাবে বার্তা তুলে দিতে পেরেছিলেন বলেই আরবের বেদুইনরাও নতুন পথ পেয়েছিল,বেঁচে থাকার পথ।
যদি আমরা এই সাংবাদিকতার তাত্ত্বিক বিশ্লেষণ করি তবে দেখতে পাবো,আরবি নাবাউন শব্দের অর্থ খবর, সংবাদ ইত্যাদি। এ থেকে নবী শব্দের উৎপত্তি,যার অর্থ সংবাদ বহনকারী। আল্লাহর পক্ষ থেকে মানুষের জন্য পয়গাম বা বার্তা বহন করার কারণে নবীকে ফার্সী ভাষায় বলা হয় পয়গাম্বর বা বার্তাবহনকারী।আবার সহিফা বা আসমানী কিতাব যেসব নবীর উপর নাজিল হয়েছে তাঁদেরকে বলা হয় রাসূল। যা আরবী রেসালত শব্দ থেকে এসেছে,অর্থ বানী,পত্র,পয়গাম ইত্যাদি এবং যিনি বানী বহন করেন তিনিই রাসূল।
মানবমন্ডলীর সবচেয়ে বড় পাওনা হলো,সাংবাদিকতার ক্ষেত্রে সততার প্রশিক্ষণ ও সংবাদদাতার নাম উল্লেখ করার নীতি । আধুনিক সাংবাদিকতার এই প্রচলন পয়গাম্বরি তরিকার ঐতিহ্য। সকল সংবাদ প্রত্যাশীকে সততার প্রশিক্ষণ প্রাপ্ত হতে হয়,এবং কে শুনেছে,কার কাছ থেকে শুনেছে ইত্যাদি যেমন যাচাই বাছাইয়ের বিষয় তেমনি সংবাদ বহনকারী কে, তাঁর ব্যক্তিগত চরিত্রইবা কেমন, তাঁর কথায় বিশ্বাস স্থাপন করা যায় কি-না ইত্যাদি যে বরাবরই যাচাইযোগ্য বিষয় ছিল তা আমরা নবী জীবন থেকেই জানতে পারি।প্রত্যেক যুগে প্রত্যেক নবী-রাসূলগণ তাঁর সময়কালের সবচেয়ে যোগ্য ব্যক্তিত্ব হিসেবেই পরিচিত ছিলেন।আর শেষ পয়গাম্বর মুহাম্মদ (সাঃ) তো সবাইকে পেছনে ফেলে ‘আল-আমিন’ খেতাবে ভূষিত ছিলেন।পয়গাম্বরি ঐতিহ্য থেকে উৎসারিত সাংবাদিকতা তাই একটি পবিত্র দায়িত্ব হিসাবে গণ্য। আর নবী রাসূলগনের প্রদর্শিত পন্থা অনুসরণে সত্য সংবাদ বহনের পবিত্র দায়িত্ব পালন শুরু সাংবাদিকতা নয় বরং একটি মৌলিক এবাদতও।
অনেকে জ্ঞানের স্থূলতার কারণে এমন দাবী করে থাকেন যে,উপমহাদেশে সংবাদপত্র প্রকাশের শিক্ষা আমরা পাশ্চাত্যের কাছ থেকে শিখেছি।তাদের জানা উচিৎ, মোহাম্মদ বখতিয়ার কর্তৃক লিখিত ‘তবকাত-ই-নাসিরী’ গ্রন্থে সংবাদ বাহকের কথা উল্লেখ রয়েছে। আবার ‘তারিখ-ই-ফিরোজ শাহী’ গ্রন্থের ভূমিকায়ও লেখক বেশ কিছু মূল্যবান মতামত পেশ করেছেন যা সাংবাদিকতায় পয়গাম্বরি ঐতিহ্যের ধারাকে অনুসরণ করে সম্পাদিত হয়েছে।
উপমহাদেশে ইতিহাসবিদগণ বিশেষ করে মিনহাজ-ই-সিরাজ তাঁর ‘তবকাত-ই নাসিরী’-তে হযরত আদম (আঃ) থেকে তাঁর সময় অর্থাৎ ১২৬০সন পর্যন্ত ধারাবাহিক ইতিহাস রচনা করে নবুওয়াতি দায়িত্বের ওয়ারিসী ধারাবাহিকতাই রক্ষা করেছেন।
সুলতানী ও মোগল আমলে সংবাদ সংগ্রহের মাধ্যমে ইতিহাস লেখার ধারাবাহিকতার পথ বিকশিত হয়।পরবর্তীতে খবর সংগ্রহের জন্য ‘ওয়াকিয়ানবিশ’ নামে সরাসরি সংবাদ লেখকের পদ সৃষ্টি করা হয়। ‘ওয়াকিয়া’ শব্দের অর্থ ঘটনা, ব্যাপার ইত্যাদি। সম্রাট আকবরের সময়ে আবুল ফজল কর্তৃক প্রণীত ‘আইন-ই-আকবরি’ নামক গ্রন্থে ১০নং আইনে ‘Regulations Regarding the Waqia Nawis’ শিরোনামে ‘ওয়াকিয়ানবিশ’ তথা সাংবাদিকদের কর্ম পরিধির উল্লেখ করা হয়েছে। ওই আইনে সাংবাদিকতার বিষয়টি যে প্রাচীনকাল থেকে চলে আসা একটি বিষয় তাও স্বীকার করা হয়েছে।মোগল আমলে প্রতিটি প্রদেশে একজন সংবাদ লেখক নিয়োগ করা ছিলো তখনকার সময়ের প্রচলিত প্রথা।এরপর যদি বাংলায় সাংবাদিকতা দেখি,তবে ইয়াঘমা ইস্পাহানীকে ঢাকায় প্রেরণ করার সময় উপদেশ দেওয়া হয় তিনি যেন প্রাদেশিক সরকারের ঘটনা ও কার্যাবলীর ধারাবাহিক রিপোর্ট শাহী দরবারে প্রেরণ করেন। মীর্যা নাথান রচিত ‘বাহারিস্থান-ই গায়বী’ নামক বিখ্যাত ইতিহাস গ্রন্থের প্রথম খন্ডে বাংলায় ওয়াকিয়ানবিশ প্রেরণ করার কথা জানা যায়।
১৭৫৭ সালে পলাশীর বিপর্যয়ের পর ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির পরিচালনায় সাংবাদিকতার নবযাত্রা শুরু হয়।ইংরেজগণ হযরত ঈশা (আঃ) -এর অনুসারী ছিল তাই তাঁর বানী এদেশীয় লোকদের মাঝে পৌঁছে দেওয়াই ছিল তাদের লক্ষ্য। সাংবাদিকদিকতার ক্ষেত্রে ইংরেজরাও পয়গাম্বরি ঐতিহ্যকে অনুসরণ করেছে। ১৮১৮ সনে ‘দিগদর্শন’ ও ‘সমাচার দর্শন’ নামে শ্রীরামপুর ব্যাপ্টিস্ট মিশন থেকে খ্রিস্টান মিশনারীরা প্রথম দুটো পত্রিকা প্রকাশ করে। ১৮১৮ থেকে ১৮৬৮ সময়কালে তারা গসপেল ম্যাগাজিন, খ্রিস্টের রাজ্যবৃদ্ধি,মঙ্গলউপাখ্যান পত্র,উপদেশক প্রভৃতি একের পর এক পত্রিকা প্রকাশ করে নিজধর্ম প্রচারে ব্যাপৃত হয়।
ততক্ষণে দেশীয় হিন্দু-মুসলিমরাও নতুন গতি পেয়েছিল।১৮৩১ সনে ঈশ্বরচন্দ্র গুপ্ত সম্পাদিত সংবাদ প্রভাকর প্রকাশিত হওয়ার বছরই মুসলমান সম্পাদিত প্রথম সাপ্তাহিক ‘সমাচার সভারাজেন্দ্র’ প্রকাশিত হয়।১৮৪৭ থেকে ১৮৭০ সময়সীমার মধ্যে বিভিন্ন সাপ্তাহিক প্রকাশিত হয়েছে।কোনটি হিন্দুদের, কোনটি নীলকরদের সমর্থক ইত্যাদি নানাভাব নিয়ে প্রকাশিত হয়।তবে প্রায় সবকটি সংবাদপত্রেই স্ব স্ব জনগোষ্ঠীর ধর্মের বিধিবিধান ও ধর্ম প্রচারের বিষয়টি ছিল মুখ্য।এসব পত্রিকার শিরোনামের দুইপাশে থাকতো ধর্মের নানান বানী।
১৮৩৭ সালে ফারসির পরিবর্তে ইংরেজিকে রাষ্ট্রভাষা করলেও মুসলমানগণ তাদের ঐতিহ্য ধরে রাখার চেষ্টা করে। ১৮৫৩সালে সৈয়দ রেয়াজতুল্লাহর সম্পাদনায় ফারসি ভাষায় ‘দূরবীন ‘ নামক একটি সাপ্তাহিক পত্রিকা প্রকাশ করে মুসলিম সাংবাদিকতার ঐতিহ্য রক্ষা ও সাংবাদিকতার পুনরুজ্জীবনের প্রয়াস চালানো হয়।১৮৬৭ সালে ফরিদপুর থেকে আলাহেদাদ খাঁ সম্পাদিত পাক্ষিক ফরিদপুর দর্পণ,১৮৭৩সালে আব্দুর রহিম সম্পাদিত বালা রঞ্জিকা,১৮৮৩ সালে ঢাকা থেকে শেখ আব্দুস সোবহান সম্পাদিত এসলাম গার্জ্জিয়ান ক্রমশ চলতে থাকা ১৯০৩ সালে সৈয়দ এমদাদ আলী সম্পাদিত নবনূর ইত্যাদি পত্রিকার মাধ্যমে মুসলিম সাংবাদিকতার আধুনিক বিকাশ যাত্রা শুরু হয়।প্রসঙ্গত বলে রাখা ভালো যে এসব সংবাদপত্রের নামগুলো বিশ্লেষণ করলেই বোঝা যায় যে সাংবাদিকতার এ বিকাশ যাত্রায় ঐতিহ্যিক ধারাটি বহমান ছিল।
ইংরেজ ও হিন্দু সমর্থক শত শত পত্রিকার মুকাবেলায় কয়েকটা মাসিক ও সাপ্তাহিক পত্রিকা বের হয়ে ইসলামের আলো টিম টিম করে জ্বালিয়ে রাখলেও গোটা ঊনবিংশ শতাব্দীর শেষ লগ্ন পর্যন্তও মুসলমানদের কোনো দৈনিক পত্রিকা ছিলনা।১৯০৬সালে কলকাতা থেকে আবুল কাশেমের ও পরবর্তীতে মুজিবর রহমানের সম্পাদনায় ইংরেজি সাপ্তাহিক ‘দি মুসলমান ‘ (পরবর্তীতে দৈনিক), মুন্সী রেয়াজ উদ্দিন আহমদ সম্পাদিত ‘ইসলাম প্রচারক’ (১৮৯১)ও ‘সাপ্তাহিক সোলতান’ (১৯০৬),মাওলানা আকরাম খাঁর সম্পাদনায় ১৯০৩ সালে কলকাতা থেকে ‘মাসিক মোহম্মদী ‘(পরে সাপ্তাহিক ও দৈনিক) ইত্যাদি ক্রমশ প্রকাশিত হতে থাকে। ১৯৩৬ সালে দৈনিক আজাদ প্রকাশের পর মুসলিম সাংবাদিকতা সারা বাংলায় ব্যাপকতা লাভ করে এবং সাংবাদিকতা প্রাতিষ্ঠানিক রূপ লাভ করে। মুসলিম সমাজে এভাবে সাংবাদিকতা চড়াই উৎরাই পেরিয়ে আজও টিকে আছে।
এখনও পর্যন্ত মাসিক,পাক্ষিক, সাপ্তাহিক, দৈনিক বিভিন্ন সংবাদপত্র প্রকাশিত হচ্ছে। বাংলায় উল্লেখযোগ্য নাম গুলো হল কলম,দিন দর্পন,নতুন গতি,মীযান প্রভৃতি ।বাদ নেই ম্যাগাজিন রূপে প্রকাশিত হওয়া,বিভিন্ন উৎসব অনুষ্ঠানকে সামনে রেখে ক্রমশ প্রকাশিত হচ্ছে বিভিন্ন ম্যাগাজিন। মুসলিম সমাজের উল্লেখযোগ্য ম্যাগাজিন হলো যুব প্রত্যাশা, নতুন গতি মাসান্তিক, মাসিক নাবিক,ওয়াদি প্রভৃতি। আজও সমাজের দর্পণ হিসাবে বস্তুনিষ্ঠ সাংবাদিকতা এ দেশে ও সমাজের অবকাঠামোকে ধরে রেখেছে। তবে সাংবাদিকতায় যখন থেকে পাশ্চাত্যের মোড় ঢুকেছে তখন থেকেই সাংবাদিকতা খানিকটা মূল রুট থেকে সরে গিয়ে পশ্চিমা ধারায় ডুবে গিয়েছে।ফলে আধুনিক সাংবাদিকতা ঐতিহ্যগত ধারার লালনে মৌলিকতা বজায় রাখতে পেরেছে কিনা তা আজ প্রশ্নের মুখে।বিশেষ করে লাম্পট্য লালনে পিনআপ ম্যাগাজিন, পর্নো পত্রিকা,পর্নো বিজ্ঞাপন, ইলেকট্রিক মিডিয়ায় যৌনতার ছড়াছড়ি ইত্যাদির মাধ্যমে তথাকথিত আধুনিক সাংবাদিকতা আমাদের মনন ও মানসের বিকাশ পথকে রুদ্ধ করে এক অন্ধকারের দিকে ধাবিত করছে। শুধু তাই নয় গতকয়েক বছর ধরে এদেশীয় কয়েকটি ইলেকট্রনিক থেকে প্রিন্ট মিডিয়া যারপরনাই নির্দিষ্ট এক রাজনৈতিক দলের দালালি করে সত্যকে মিথ্যা এবং মিথ্যাকে সত্য বলে জনমানসে ভ্রান্ত বীজ বোনছে,যা সাংবাদিকতার আলো বিকিরণকারী, সত্যের লন্ঠন ও দুষ্টের দমনে সহায়ক ভূমিকার সাথে সাংঘর্ষিক।
সংবাদপত্রের জগতে এখন অনলাইন নিউজ পোর্ট্রাল একটা গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করছে। এ বৈচিত্র সাংবাদিকতার বিকাশে সাহায্য করলেও এর মধ্যেও অনেক পরগাছা ঢুকে গেছে।সাংবাদিকতার নামে নিজেদের স্বার্থসিদ্ধির বিষয়টিকে হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহার করে একে কুলষিত করছে বিশেষ এক শ্রেণীর সংবাদ মাধ্যম গুলো। তবে এর ভেতর থেকে শেষ পর্যন্ত কেবল সেই সব পত্রিকাই টিকে থাকবে যেগুলো সাংবাদিকতার আদর্শকে নূন্যতম পর্যায়ে হলেও ধারণ করে আছে।শত শত দৈনিক,মাসিক,সাপ্তাহিক, পাক্ষিক পত্রিকা প্রকাশনার মধ্য দিয়ে সংবাদপত্র ও সাংবাদিকতা আজ এক বিকাশমান শিল্পে রূপ লাভ করেছে।কিন্তু সাংবাদিকতার ক্ষেত্রে এবাদতের মনোভাব নিয়ে গড়ে ওঠা ঐতিহ্য এখন অনেকটাই নিষ্প্রভ। এর নিষ্কৃতি যত তাড়াতাড়ি সম্ভব করা উচিৎ। বর্তমানে সমাজের মুখপাত্র তথা সংবাদমাধ্যম গুলোর এহেন দ্বিচারিতার মূলোৎপাটন করতে নিজ দায়িত্বে মুসলিম শিক্ষিত ছাত্র-যুব সমাজকে এগিয়ে আসতে হবে। আজ মুসলমান যুবকরা তাদের ঐতিহ্য ভুলে গিয়েছে।সমাজ গঠনের নানা উপাদানে তাদের পূর্বপুরুষের যে কত অবদান রয়েছে, তা রক্ষা তো দূর তারা সে সম্পর্কে ধারণাই রাখে না।
আজ এই দূর্দিনে, উদাসীনতাকে পেছনে ফেলে নৈতিক দাবীকে প্রাধান্য দিয়ে আসুন মুসলিম সমাজের পূর্ব গৌরবকে ছিনিয়ে আনি । মানবতার জন্য হুমকি ক্ষমতা গুলোর চোখ রাঙানিকে ভয় না পেয়ে আসুন নিজেকে চিনি,নিজেকে চেনায়।