[contact-form][contact-field label=”Name” type=”name” required=”true” /][contact-field label=”Email” type=”email” required=”true” /][contact-field label=”Website” type=”url” /][contact-field label=”Message” type=”textarea” /][/contact-form]
করোনা আর লকডাউনে দীর্ঘদিন বিধিনিষেধ কাটিয়ে উঠে ধীরে ধীরে কাজে ফিরেছে প্রায় সকলেই। কিন্তু যাদের ফিরতে দেরি হলো, তারা সবাই আর ফিরবে তো? এই প্রশ্নের আবর্তে এখন স্কুলের প্রতিটা ক্লাসরুম, চক, রেজিস্টার খাতা। দীর্ঘদিন স্কুলের গেট বন্ধ থাকার ফলে যারা আকালে পাঠ চুকিয়ে দিয়ে কাজের খোঁজে পাড়ি দিয়েছে বা কয়েক পয়সা কমাতেও শুরু করেছে তাদের কি স্কুলে ফিরিয়ে নিয়ে আসা যাবে? এটাই এখন সবথেকে প্রাসঙ্গিক প্রশ্ন। স্কুল-কলেজ ছাড়া সবকিছুই প্রায় স্বাভাবিক হয়েছে অনেক আগে থেকে। কিন্তু শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের ছন্দে ফিরতে বড্ড সময় লেগে গেল। তাই হয়ত পরিতাপের ইতিহাস হয়ে থাকবে, বর্তমান প্রজন্মের বহু সংখ্যক পড়ুয়া শুধুমাত্র স্কুল বন্ধ থাকায় স্কুলছুট হলো।
মাসের পর মাস স্কুল বন্ধ থাকায় ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে সমস্ত পড়ুয়ারায়। তবে শহরকেন্দ্রিক এলাকায় বসবাসকারী ছাত্রছাত্রীরা অনলাইনে ক্লাস করার সুযোগ পেলেও, তা থেকে বেশি বঞ্চিত হয়েছে গ্রাম ও প্রত্যন্ত অঞ্চলের পড়ুয়ারা। এছাড়া অনলাইনে ক্লাস করার সুবিধা-অসুবিধা নিয়ে বিস্তর বিতর্ক আছে। এ কথা অস্বীকার করার কোন উপায় নেয় যে, অনলাইন ক্লাসে বঞ্চিত হওয়ার দরুন বহু পড়ুয়া পড়াশোনায় আগ্রহ হারিয়েছে। এমনকি আত্মহত্যার ঘটনাও ঘটেছে। সেই সঙ্গে লকডাউনের ফলে সংসারের দৈন দশায় বহু ফুটন্ত কুঁড়ি ফুলে পরিণত হওয়ার আগেই স্তব্ধ হয়ে গেছে। স্কুলছুটের কারণ চিহ্নিত করতে গিয়ে ন্যাশনাল প্রোডাক্টিভিটি কাউন্সিলের পক্ষ থেকে বার বার স্পষ্ট করা হয়েছে দারিদ্রতার জন্য কাজের খোঁজে অন্যত্র যাওয়ার প্রবণতা গরিব ও সংখ্যালঘু পরিবারগুলোর শিশু-কিশোরদের স্কুলছুট হওয়ায় অন্যতম কারণ। তবে এই স্কুলছুটের করাল গ্রাস থেকে অনেকটাই মুক্ত ছাত্রীরা। কন্যাশ্রীর মতো প্রকল্প চালু হওয়ার পরে পশ্চিমবঙ্গে মেয়েদের মধ্যে স্কুলছুটের প্রবণতা কমছে। কিন্তু দীর্ঘদিন স্কুল বন্ধ থাকার ফলে বহু ছাত্রীর বিবাহ হয়ে যাওয়ায় তারা পড়াশোনায় রাশ টেনেছে।
দীর্ঘদিন পরে পশ্চিমবঙ্গে স্কুলের গেট খুলতে চলেছে। শিক্ষা দপ্তর নতুন করে বিজ্ঞপ্তি জারি করে বিস্তারিত প্রকাশ করেছে কিভাবে সামাজিক দূরত্ব ও স্বাস্থ্য বিধি মেনে পাঠনপাঠন শুরু করতে হবে। স্কুলগুলোও সেই মতো প্রস্তুতি নিতে ব্যস্ত, যেন সাজো সাজো রব। অনলাইন পড়াশোনার যান্ত্রিকতা থেকে মুক্ত হয়ে ক্লাসরুম,শিক্ষক এবং সহপাঠীর পাশাপাশি বসে ক্লাস করার সুযোগ এসেছে বহুদিন পর। সেই আনন্দে অনেক পড়ুয়ায় প্রহর গুনতে শুরু করেছে। কিন্তু যারা লকডাউনের ফলে পড়াশোনায় ইচ্ছা হারিয়ে বা সংসারে অভাবের তাড়নায় আর স্কুলমুখো হতে চায় না তাদের কি হবে?
স্কুল খোলার সঙ্গে সঙ্গেই সবথেকে উদ্বিগ্নের বিষয় হলো স্কুলছুট। সাধারণত সারা দেশে স্কুলছুট একটা জ্বলন্ত সমস্যা। এইবারে করোনা এবং তার ফলে লকডাউন স্কুলছুটে নতুন মাত্রা যোগ করেছে। স্কুলছুটের পরিসংখ্যান সুশীল সমাজের কপালে চিন্তার ভাঁজ ফেলে। প্রতি পশ্চিমবঙ্গে প্রাথমিক স্তরে ভর্তির পর শতকরা ৯২জন উচ্চ প্রাথমিক স্তরে গিয়ে পৌঁছায়। মাধ্যমিক পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করে শতকরা ৬৭জন এবং ৫৫জন উচ্চ মাধ্যমিকে পড়াশোনা করে। বিশেষ করে সংখ্যালঘু অধ্যুষিত জেলাগুলোতে স্কুলছুটের হার তুলনামূলকভাবে অনেক বেশি। ইতিমধ্যে সংবাদমাধ্যমে প্রকাশিত বেশ কয়েকটা ঘটনা থেকেই স্পষ্ট হয়ে গেছে করোনা কালে স্কুলছুটের হাল-হকিকত। স্কুল বন্ধ থাকার মধ্যেই স্কুলে মাধ্যমিকের ফর্ম পূরণ করতে গিয়ে শিক্ষক মহাশয়রা চাক্ষুষ করেছেন, অনেকে পড়ুয়ায় ফর্ম পূরণ করেনি। অনেকই কাজে লেগে গেছে। আবার বহু ছাত্র পাড়ার দাদার সাথে ভিন রাজ্যে গিয়ে রাজমিস্ত্রি বা শ্রমিকের কাজে যোগ দিয়েছে। মালদা ও মুর্শিদাবাদে এই সংখ্যাটা বেশ উদ্বেগজনক।
স্কুলে করোনাকালীন ছুটির ঘন্টা শেষে এখন সময় স্কুলছুট হওয়া পড়ুয়াদের জন্য নতুন প্রকল্প ও পরিকল্পনা করা। ‘স্কুলে ফিরে চলো’ শিরোনামে বিশেষ প্রচারাভিযান শুরু করলে মন্দ হবে না। বরং তা স্কুলছুটদের রুখতে গ্রহণযোগ্য পদক্ষেপ হতে পারে। আর এই কাজ করতে সবথেকে বেশি এগিয়ে আসতে পারেন স্কুল শিক্ষকরাই। কোন ক্লাসের কোন পড়ুয়া স্কুলে আসছে না তার বিস্তারিত তথ্য তাদের নখদর্পণে। তাই তাদের উদ্যোগেই শুরু হোক এই প্রচারাভিযান। সেই সঙ্গে এগিয়ে আসতে হবে বিভিন্ন ছাত্রসংগঠন, মানবাধিকার সংগঠন এবং পড়ার ক্লাবকেও। সকলেরই লক্ষ্য থাকা উচিত নিজের পাড়ায়। পাশের বাড়ির পড়ুয়াটা স্কুলে যাচ্ছে কিনা সবারই উচিত খোঁজ রাখা এবং প্রয়োজন হলে তাকে স্কুলে ফিরিয়ে দিয়ে আসা। আমরা তখনই প্রকৃত অর্থে করোনা যুদ্ধে জয়ী হতে পারবো, যখন দায়িত্ব নিয়ে স্কুলছুটদের আবার স্কুলে ফিরিয়ে নিয়ে যাবো। পরিশেষে আগামীর ফুটন্ত কুঁড়িদের আকালে ঝরে পড়া আটকাতে কবির দুটো লাইন খুবই প্রাসঙ্গিক-
“সকলের তরে সকলে আমরা,
প্রত্যেকে মোরা পরের তরে।”